This is default featured slide 1 title

Go to Blogger edit html and find these sentences.Now replace these sentences with your own descriptions.

This is default featured slide 2 title

Go to Blogger edit html and find these sentences.Now replace these sentences with your own descriptions.

This is default featured slide 3 title

Go to Blogger edit html and find these sentences.Now replace these sentences with your own descriptions.

This is default featured slide 4 title

Go to Blogger edit html and find these sentences.Now replace these sentences with your own descriptions.

This is default featured slide 5 title

Go to Blogger edit html and find these sentences.Now replace these sentences with your own descriptions.

রবিবার, ২৫ অক্টোবর, ২০১৫

অন্যরকম ভালোবাসা



 রাত পৌনে একটা। জীর্ণ একটি টিনশেড আধাপাকা ঘর। একটি গাড়ি এসে দাঁড়ালো। চালক কয়েকটি পানির বোতল নিয়ে গাড়ি থেকে নামলেন। বাড়ির সামনে পাঁচটি ছোট কবর। সেই কবরগুলো ঘিরে রয়েছে অনেকগুলো ফুলগাছ। চালক হাতের পানির বোতলগুলো থেকে প্রত্যেকটি গাছের গোড়ায় পানি দিতে লাগলেন। পানি দেয়া শেষে কবরগুলোর দিকে তাকিয়ে কাঁদতে থাকলেন। কখনো কখনো কবরগুলোতে হাত বুলাতে লাগলেন। এভাবে করতে করতে রাত শেষ হয়ে এলো। মুয়াজ্জিনের আযানে চালক সম্বিত ফিরে পেলেন। দ্রুত খালি বোতলগুলো নিয়ে আবার গাড়িতে উঠলেন। চলতে শুরু করলো গাড়ি।

সায়েমের বাগান করার খুব শখ। বাড়িতে তার বাগান ছিল। কিন্তু ভার্সিটির হলে সে বাগান কই পাবে? তার উপরে সে পড়ে প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিতে। যেখানে মানুষের জায়গা হওয়াই কঠিন, বাগান তো পরের কথা। তারপরও সায়েম বাগান করার ব্যাপারে বদ্ধপরিকর। হোস্টেলের ছাদ তালা মারা। ছাদে যাওয়া ভীষন বারণ। কোনভাবেই সে ছাদে বাগান করার অনুমতি পেলনা। অবশেষে সে রুমের বারান্দায় কয়েকটি টব কিনে গাছ লাগায়। এতে তার বাকী রুমমেট দু’জন ভীষন বিরক্ত। তারা আগের মত বারান্দায় আরাম করে বসতে পারেনা। কাপড় শুকাতেও অসুবিধে হয়। মাঝে মাঝে সায়েম গাছগুলোতে পানি দিলে বারান্দা ভিজে নষ্ট হয়ে যায়। এতসব অভিযোগের পরও নানানভাবে রুমমেটদের ম্যানেজ করে তার বাগান কার্যক্রম চালাতে থাকে। মাস দুয়েক পর যখন সবগুলো গাছে সুন্দর সুন্দর ফুল ফুটতে থাকে তখন অবশ্য রুমমেটদের অবস্থান পরিবর্তন হয়। সায়েম যখন মাঝে-মধ্যে দেখে তার কোন রুমমেট গাছগুলোতে পানি দিচ্ছে তখন সায়েমের মন আনন্দে নেচে উঠে।

ফুলগাছগুলো সায়েমের কাছে শুধুমাত্র গাছ ছিলনা। বরং বলা যেতে পারে সায়েমের বেস্টফ্রেন্ড। সায়েম তাদের সাথে বসে বসে গল্প করে। তাদের গান শোনায়, নিজেও তাদের কাছ থেকে গান শুনে। হুট করে কেউ দেখে ফেললে চমকে উঠে বলে কই আমি কারো সাথে কথা বলছিনা! আমি আপন মনে গান করছিলাম। অনেকে মনে করতো সায়েম বোধহয় মাথার তার দুটা ছিঁড়া। নইলে গাছের সাথে এত কিসের মাখামাখি। কিন্তু বাস্তবে এই ব্যাপারটা ধোপে টিকতো না। কারণ বাস্তবে সায়েম ছিল অত্যন্ত মেধাবী, বুদ্ধিমান, মানুষের কাছে অতিপ্রিয় সদালাপী একজন মানুষ।

সায়েম শুধুমাত্র ফুলগাছ নিয়ে পড়ে থাকতো ব্যাপারটি সেরকম কিছু নয়। সে রাজনীতিও করে। দেশ গড়ার রাজনীতি, ইসলাম প্রতিষ্ঠার রাজনীতি। জালিম সরকারের কাছে জনপ্রিয় এই ছেলেটি মারাত্মক হুমকি হিসেবে আবির্ভূত হয়। একদিন রাতে পুলিশ এসে তাকে ধরে নিয়ে যায়। থানায় ভীষণ অত্যাচার চালাতে থাকে সায়েমের উপর। সায়েম অত্যন্ত দৃঢ় মনোবল সম্পন্ন। সে চিন্তা করে রেখেছিলো জালিম পুলিশদের কাছে কিছু চাইবেনা। উহ আহ ও করবেনা। দাঁতে দাঁত চেপে একের পর এক নির্যাতন সহ্য করে যাচ্ছিল। ঘন্টা দুয়েক মার খাওয়ার পর সায়েমের মনে হচ্ছে তৃষ্ণায় বুক ফেটে যাবে। সে অস্ফুট স্বরে বলে উঠলো পানি... পানি...

তাকে যে পুলিশটি বেশী মারছিলো তার নাম ঝন্টু। সায়েম অবাক হয়ে দেখলো ঝন্টুই পানি নিয়ে আসলো। ঝন্টু ধীরে ধীরে পানি গ্লাসে ঢাললো। তারপর তাকে পানি না দিয়ে সে নিজে একটু একটু করে চুমুক দিয়ে পানি খেতে লাগলো। এতে সায়েমের তৃষ্ণা আরো কয়েকগুণ বেড়ে যায়। চোখ বন্ধ করে সে আল্লাহকে ডাকতে থাকে। উপুড় করে সায়েমকে ফেলে অল্প কিছু পানি মেঝে ছড়িয়ে বলে চেটে চেটে খা। সায়েম শুধু আল্লাহকে ডাকা ছাড়া আর কিছু বলেনা। এরপর সায়েম একটি চেয়ারে বসানো হলো। হাত-পা চেয়ারের হাতল ও পায়ার সাথে বেঁধে দুই কানে চিমটি দিয়ে বৈদ্যুতিক তার সংযোগ করে বলে। তোকে এখন কারেন্ট শক দিয়ে মেরে ফেলবো। যদি বাঁচতে চাস তবে তোর সঙ্গীদের ঠিকানা দে। সায়েম কিছু বলেনা। কেবল চোখ বন্ধ করে আল্লাহকে ডাকতে থাকে। সুইচ অন করে ঝন্টু। ঝাড়া তিরিশ সেকেন্ড। সায়েম ফুসফুস যেন ফেটে যাওয়ার উপক্রম। পুরো মুখে সব রক্ত জমে গিয়েছে। সায়েম লক্ষ্য করে তার মুখ শুকনো খটখটে হয়ে গিয়েছে। আর টিকতে পারেনা। তৃষ্ণায় ছটফট করতে করতে একসময় জ্ঞান হারিয়ে ফেলে।

হঠাত সায়েম লক্ষ্য করে তার বারান্দার প্রিয় সব ফুলগাছ। তার একান্ত বন্ধু। সবাই দৌড়ে আসছে। আলমান্ডা আর হাসনাহেনা ভীষন জোরে নড়ে নড়ে বাতাস করতে থাকে। শিউলি বেলী আর টগর মিলে কুড়ানো পাতা সব উড়িয়ে সায়েমের মুখের সামনে ধরে আর সেখান থেকে নিঃসৃত হতে থাকে পাতার রস। আহা! কি মধু কি মিষ্টি। সায়েমের সব যন্ত্রনা মুহুর্তেই বিলীন হয়ে যায়। হুট করে আবার জ্ঞান ফেরে সায়েমের। অবাক হয়ে সায়েম লক্ষ্য করে সে ভীষন ঝরঝরে। যন্ত্রনা মোটেও নেই। মুখে এখনো সেই মিষ্টি পানির স্বাদ। কোন তৃষ্ণা নেই। কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে মহান রবের আর ভালোবাসার আবেগে বুকটা ভরে উঠে গাছগুলোর জন্য।

থানা হাজতে এভাবে নির্যাতন চলতে থাকে দুইদিন। আর সায়েমের সেবা করে যাচ্ছে গাছগুলো। অবশেষে পুলিশ নামের পাষন্ডরা তার থেকে কোন কথা বের করতে না পেরে তার দুই পায়ে গুলি করে। তাদের ইচ্ছে ছিল পঙ্গু করে দিবে সায়েমকে। গুলিবিদ্ধ সায়েমকে হাসপাতালে ভর্তি করায়। ডাক্তাররা পরীক্ষা নিরীক্ষা করে জানান, ক্ষতস্থান কয়েকদিন আগের। ইনফেকশন হওয়ার যথেষ্ট আশংকা রয়েছে। যদি ইনফেকশন হয় তাহলে পা কেটে ফেলা ছাড়া আর কোন উপায় নেই। কাঁদতে থাকে সায়েমের বাবা মা ভাই বোন। ডাক্তার অনেকগুলো পরীক্ষা দেয়। রাতে সায়েম ঘুমিয়ে পড়লে আবার সেই গাছগুলোর সাথে দেখা হয়। তারা সবাই কাঁদতে থাকে আর সান্তনা দিয়ে সায়েমকে বলে আমরা আমাদের মত চেষ্টা করছি। তোমার কোন ক্ষতি হবেনা।

পরদিন সবগুলো টেস্ট রিপোর্ট দেখে ডাক্তার সিদ্ধান্ত দেন অপারেশন করে বাম পাটা কেটে ফেলতে হবে। ওটায় মারাত্মক ইনফেকশন হয়ে গিয়েছে। সায়েমের বাবা-মা রাজী না হয়ে উপায় থাকেনা। ছেলেকে বাঁচানোর জন্য একটা পা কেটে ফেলতেই হবে। অপারেশন হবে আরো দুদিন পর। রাতে আবার ঘুমিয়ে পড়লে সায়েম দেখে তার প্রিয় গাছগুলো এসেছে। তারা অনেকগুলো গাছের পাতা একত্র করে লাগিয়ে দিচ্ছে। নানান ধরণের ঔষুধ লাগিয়ে দিচ্ছে। আর সবাই সমানে কাঁদছে। সান্তনা দিচ্ছে। মিষ্টি রস খাওয়াচ্ছে। যাওয়ার সময় বলে গেল, ডাক্তারকে যেন রিকোয়েস্ট করে টেস্টগুলো আবার করাতে।

ঘুম থেকে উঠে সায়েম লক্ষ্য করে তার পায়ের যন্ত্রণা অনেক কমে গিয়েছে। সে তার বাবার কানে কানে বলে বাবা আমার মনে হয় পা না কাটলেও চলবে। আপনি ডাক্তারকে একটু বুঝিয়ে বলুন যেন টেস্টগুলো আবার একটু করতে বলে। বাবা বলেন, কেন তোর এমন মনে হচ্ছে? সে বিশদ না বলে বললো, এমনিই মনে হচ্ছে তাই বললাম। ডাক্তার আসলে সায়েমের বাবা আবার টেস্ট করানোর কথা বললে অবিশ্বাসের চোখে ক্ষতস্থান দেখতে দেখতে বললেন এক রাতের মধ্যে কি আর পরিবর্তন হবে? তবুও সায়েমের বাবার পীড়াপীড়িতে আবার টেস্ট করালেন। এবার সবগুলো টেস্টেই পজেটিভ রিপোর্ট আসলো। ডাক্তার কিছু না বুজতে পেরে বললেন আগের রিপোর্টটা মনে হয় ভুল ছিল। সায়েমের বাবাকে ধন্যবাদ দিয়ে বললেন আপনি না বললে একটা অঘটন ঘটে যেতে পারতো। সায়েমের বাবা-মা খুশিতে বার বার আল্লাহকে সিজদাহ দিতে লাগলেন। সায়েমও আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানায় আর গাছগুলোর কথা কাউকে বলেনা। কারণ তার এই কথা কেউ বিশ্বাস করবেনা।

প্রতি রাতেই গাছগুলো আসে সেবা করতে। মিষ্টি রস খাওয়াতে। সায়েম ঘুমের মধ্যে তাদের সাথে গল্প করে। সায়েম হাসপাতালে গ্রেফতার অবস্থায় ছিল। ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে উঠছে। একদিন পাহারাদার পুলিশগুলোর সাথে আরো অনেক পুলিশ আসলো। তারা সায়েমকে নিয়ে যাবে কারাগারে। সায়েমের বাবা-মা পুলিশগুলোর হাতে পায়ে ধরে বলতে থাকে ছেলেটা এখনো হাঁটতে পারেনা। এই অবস্থায় কারাগারে গেলে সে কিভাবে চিকিৎসা পাবে? কিন্তু কে শোনে কার কথা! জালিমরা হাসপাতাল থেকে সায়েমকে তুলে নিয়ে যায়। সায়েম হাত নেড়ে বিদায় জানায় সবাইকে। আবার কবে দেখা হবে কে জানে! মা সায়েমকে জড়িয়ে ধরে চুমু খেতে থাকেন। পুলিশ হ্যাঁচকা টান দিয়ে সায়েমকে গাড়িতে তুলে। ব্যাথায় কঁকিয়ে উঠে সায়েম।

কারাগারের অবস্থা অত্যন্ত ভয়াবহ। তবে এই ভয়াবহ পরিস্থিতিতেও ভালো আছে সায়েম। কারণ সারা রাত যখন সে ঘুমে থাকে তখন তার সাথে আড্ডা দিতে আসে গাছগুলো। সায়েমের যেসব বন্ধু তার সাথে দেখা করতে আসে সে সবাইকে বলে যেন তার গাছগুলোতে পানি দেয়া হয়। এভাবে কিছুদিন যায়। ইতিমধ্যে পুলিশ আবার সায়েমদের হলে যায়। জঙ্গী আস্তানার ভুয়া কথা বলে হল বন্ধ করে দেয়। এই খবর সায়েমের কানে পৌঁছায়। সে তার দুইজন সহকর্মীকে খবর পাঠিয়ে বলে যেন গাছগুলোর খবর নেয়। কিন্তু সবার অবস্থায়ই বেগতিক। কে কার খোঁজ নেয়!

সায়েম এখন সুস্থ। আগের মতই হাঁটতে পারে। কিন্তু দুঃখের কথা গাছগুলো আর আগের মত স্বপ্নে দেখা দেয়না। গত এক সপ্তাহ একবারও আসেনি। সায়েম তার বন্ধু সহকর্মীদের খবর পাঠায়। তাদের মাধ্যমে জানতে পারে তার প্রিয় গাছবন্ধুগুলো আর নেই। পানির অভাবে সব মারা গিয়েছে। ভীষন শক খায়। এ যেন পুলিশের দেয়া বৈদ্যুতিক শকের চাইতেও বেশী। এখন পানিই খেতে পারেনা সায়েম। মনে হয় যেন গলায় কাঁটার মত বিঁধে পানিগুলো। 

দীর্ঘ সাত মাস পর কারাগার হতে মুক্তি পায় সায়েম। বের হয়েই প্রথমে হলে আসে। প্রহরীতো প্রথমে খুলতে চায়না, গাছের প্রতি সায়েমের ভালোবাসার কথা সে জানতো তাই আর বেশীক্ষন বাধা না দিয়ে দরজা খুলে দেয়। জনমানবহীন হলে সায়েম দৌড়ে দৌড়ে তার রুমে আসে। কঙ্কাল হয়ে আছে তার প্রিয় গাছগুলো। মানুষহীন হলের নিস্তব্ধতা ভেঙ্গে খান খান হয় সায়েমের আর্তনাদে। শুকিয়ে যাওয়া ফুলগাছগুলো জড়িয়ে ধরে কাঁদতে থাকে সে। প্রহরীরাও অপরাধীর মত দাঁড়িয়ে কাঁদতে থাকে।


সবগুলো গাছ টবসহ তুলে নিয়ে আসে হল থেকে। চলে আসে নিজেদের বাড়িতে। নিজের হাতে পাঁচটি কবর খুঁড়ে সমাহিত করে ফুলগাছগুলো। ছোট ছোট সাইনবোর্ড বানিয়ে কবরগুলোর সামনে লিখে দেয়। হাসনাহেনা, শিউলি, টগর, বেলী, আলমান্ডা। তারপর কিছুদিন পর সে বাড়িও ছাড়তে হয়। কারণ ফ্যাসিস্ট পুলিশ তার পিছু ছাড়েনা। এখন সে শহরে নাম গোপন করে বসবাস করে। এতদিনে সে সফল ব্যবসায়ীও হয়ে গিয়েছে। তবুও সে একমুহুর্ত ভুলে থাকতে পারেনা গাছগুলোকে। সেই গাছগুলো যে গাছগুলো নিজেদের রস নিংড়ে তাকে পানি খাইয়েছে। একদিন পানির অভাবেই তাদের মৃত্যুবরণ করতে হয়েছে। তাই এখনো সুযোগ পেলেই সায়েম তার গাড়ি নিয়ে রাতের আঁধারে বের হয়ে পড়ে। যেভাবে একসময় অনেকগুলো রাতে তাকে সময় দিয়েছে গাছগুলো। 



               

শুক্রবার, ২৩ অক্টোবর, ২০১৫

অধ্যাপক গোলাম আযম রঃ, আমাদের ইমাম



কিছু মানুষের জন্মই হয় হিরো হওয়ার জন্য। পাঞ্জেরী হওয়ার জন্য। তাদের দিকে তাকিয়ে মানুষ আগুনে ঝাঁপ দিতেও কার্পন্য করেনা। এদের পুরো জীবনটাই সাক্ষী হয়ে থাকে মানবজাতির জন্য। এরা শহীদ, সাক্ষ্যদাতা। জীবনের প্রতিটি কাজে ইসলামের সাক্ষ্য দেয়াই ওনাদের কাজ।

এমন একজন কিংবদন্তি মানুষ অধ্যাপক গোলাম আযম।
৭১ সালের বাম-রামদের যৌথপ্রজেক্ট বাংলাদেশে বাস্তবায়ন হলে অনেকে মনে করেছে এদেশে ইসলামী আন্দোলন আর কোনদিন দাঁড়াতে পারবে না। মনে বল নিয়ে বিদেশে থেকেও আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়ে গিয়েছেন। একের পর এক ষড়যন্ত্রের মুখে ছিলে অবিচল, নিঃসংকোচ, নিরুদ্বিগ্ন। মহান রবের প্রতি অবিচল আস্থায় যেকোন পরিস্থিতে শান্ত থাকার অনুপ্রেরণা তিনি।

তিনি এমন এক আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়ে গিয়েছেন যেখানে দুনিয়াবী কোন স্বার্থ পাওয়া যায়না। যে দেশে রাজনীতি একটি লাভজনক ব্যবসা সে দেশে তিনি মানুষকে পকেট থেকে টাকা বের করে সমাজের উপকার করার রাজনীতি শিখিয়েছেন। তিল তিল করে কঠিন সময়গুলো পার করে আজ এই পর্যায়ে নিয়ে এসেছেন। যুদ্ধাপরাধ বিচারের নামে ওনাকে হত্যা করার পাঁয়তারার সময় গ্রেপ্তারের প্রাক্কালে সাংবাদিকরা যখন জিজ্ঞাসা করেছিল আপনার ভয় করছে না? তিনি জবাব দিলেন, তিনি জবাব দিলেন,ভয়? ভয় কিসের? ইসলামী আন্দোলনের কর্মী হিসেবে শাহাদাতের কামনা করেছি সারা জীবন...আর অন্যায়ভাবে যদি মৃত্যু দেয়া হয় শহীদ হওয়ার গৌরব পাওয়া যায়... আল্লাহকে ছাড়া কাউকে "ভয় করাতো জায়েজই নাই,আল্লাহ ছাড়া কাউকে ভয় করার অনুমতি নাই।"

গতবছরের এমন দিনে একটি দুইদিনের প্রশিক্ষনের শেষ দিন ছিল। যখন খবর পেলাম আমাদের ইমাম আর নেই তখন নিজেকে ধরে রাখাটা খুব কষ্টকর হচ্ছিল। যদিও জানি সবাইকে মৃত্যুবরণ করতে হয়। তারপরও যেন মানতে পারছিলাম না। বার বার চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে করছিলো না, কখনো না, গোলাম আযম মরতে পারেনা। এক অর্থে গোলাম আযমদের মৃত্যু নেই। তাঁরা শহীদ। শহীদের মৃত্যু হয়না। আমরা তা সহজে বুঝতে পারিনা। শুধু তাই নয়, আল্লাহ তায়ালা আরো বলেছেন শহীদেরা আল্লাহর পক্ষ থেকে রিযিক প্রাপ্ত হন। হে আল্লাহ তুমি আমাদের ইমামকে শহীদ হিসেবে কবুল করে নাও।

জুমুয়ার নামাজের পর চট্টগ্রামের প্যারেড মাঠে জানাজার নামাজে শুধু চোখ দিয়ে পানি ঝরছিলো। বক্তারা কি বলছিলো এগুলো কোন কিছুই আমার মাথায় ঢুকেনি। আমি কেবলই চোখ মুছেছি। যতবারই চোখ মুছি আবারো চোখ ঝাপসা হয়ে যায়। এরপর হাল ছেড়ে দিয়েছি। অবিরল ধারায় ঝরে পড়া অশ্রুকে পড়তে দিয়েছি। আজও যখন পোস্টটা লিখছি বার বার ল্যাপটপের স্ক্রীন ঝাপসা হয়ে যাচ্ছে। ওগো
মাবুদ তুমি আমার ইমামকে, আমার হিরোকে, আমার পাঞ্জেরীকে, আমার আমীরকে তোমার মেহমানকে শান্তিতে রাখো। আমি জানি তুমি উত্তম মেহমানদার। তোমার সেরা গোলাম "গোলামে আযমকে" পুরষ্কিত করো। আমীন


বৃহস্পতিবার, ২২ অক্টোবর, ২০১৫

চিত্তরঞ্জন, কালীদাস আর স্বাধীন বঙ্গভূমি


ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থার অপারেশনাল হেডকোয়ার্টার কোলকাতার ভবানীপুরে ১৯৬২ সালে চিত্তরঞ্জন সূতার ও কালিদাস বৈদ্যকে নিয়ে স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী পরিষদ নামে একটি সংস্থা গঠিত হয়। আমার জানামতে আমাদের তথাকথিত স্বাধীনতা নিয়ে এটিই সর্বপ্রথম কোন উদ্যোগ। এবার আসুন এই দুইজনকে নিয়ে একটু আলোচনা করা যাক, 

চিত্তরঞ্জন সূতারঃ
১৯৫১ সালের শেষদিকে তিনি পূর্বপাকিস্তানে প্রবেশ করেন। সাথে ছিলেন কালিদাস বৈদ্য ও নিরোধ মজুমদার। তিনি রিচার্স এন্ড এনালাইসিস উইং (R&AW) এর কর্মকর্তা ছিলেন। তিনি ১৯৭১ সালে ভবানীপুরের ২৬ নম্বর রাজেন্দ্র প্রসাদ সড়কে বাস করতেন। ভারতীয় পাসপোর্টে তার নাম ভুজঙ্গ ভূষন রায়। তাছাড়া তিনি বাংলাদেশের দক্ষিনাঞ্চলকে হিন্দু রাজ্যে পরিণত করার জন্য স্বাধীন বঙ্গভূমি নামে  আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছেন, এই আন্দোলনে তার নাম হচ্ছে পার্থ সামন্ত। ৪৭ সালে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠা তথা দেশ বিভাগের পর থেকে ২০০২ সালের নভেম্বর মাস পর্যন্ত ৫৩ বছরের মধ্যে প্রায় ৩৯ বছর কাটিয়েছেন কলিকাতায়।

১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্টের সময় নির্দলীয় ব্যানারে পূর্ববাংলার প্রাদেশিক পরিষদ এবং আওয়ামী লীগের টিকেটে ১৯৭৩ সালে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম জাতীয় সংসদের সদস্য ছিলেন তিনি। ১৯৭৫ সনের ১১ আগস্ট তত্কালীন বাকশাল দলের এই এমপি ভারতে যাওয়ার পর আর কখনও বাংলাদেশে ফিরে আসেননি। প্রায় এক যুগ আগে দিল্লীতে মারা যাওয়ার আগ পর্যন্ত কলিকাতার ভবানীপুরের বাসভবন সানি ভিলায় স্থায়ীভাবে বসবাস করতেন কখনো বামদল, কখনও নির্দল, কোন সময় নেপথ্যচারী এবং স্বাধীনতার পর দুই বছর ধরে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সক্রিয় দেখা গেছে তাঁকে। আবার ৭০ সালের নির্বাচনের সময় তফশিলী হিন্দু সম্প্রদায় ভিত্তিক নতুন রাজনৈতিক সংগঠন গণমুক্তি দলের রূপকার ছিলেন চিত্ত সুতার। ৭৫ সালে বাকশাল গঠনেও ছিল তাঁর বিশেষ ভূমিকা। ১৯৫৭ সালে আওয়ামী লীগের সভাপতি মাওলানা ভাসানী ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ) গঠন করলে চিত্তরঞ্জন সুতার সে দলে যোগ দেন ।

কালিদাস বৈদ্যঃ
তিনি সূতারের সাথে বাংলাদেশে প্রবেশ করে ঢাকা মেডিকেল কলেজে ভর্তি হন। তখন থেকেই তিনি পূর্বপাকিস্তানকে পূর্ববঙ্গ নামে মুক্তির জন্য তৎপর। যদিও তিনি পাকিস্তান ভাঙ্গার এজেন্ডা নিয়েই এদেশে প্রবেশ করেছেন তবুও তিনি প্রচার করতেন এদেশে হিন্দুদের উপর অত্যাচার হয় বলেই তিনি ভাংতে চেয়েছেন। তিনি বাংলা সেনা নামে একটি সংগঠনের প্রধান ছিলেন। যেটি বাংলাদেশে নিষিদ্ধ ছিল। তিনি কোলকাতা হতে এই সংগঠন পরিচালনা করতেন। ১৯৮২ সালে চিত্তরঞ্জনের বঙ্গভূমি আন্দোলন একটা গুরুত্বপূর্ণ মোড় নেয়। ঐ বছরের ২৫শে মার্চ ঘোষিত হয় স্বাধীন বঙ্গভূমি রাষ্ট্র। তৈরী হয় সৈন্য বাহিনী বঙ্গসেনা। সৈনাধ্যক্ষ ডাঃ কালিদাস বৈদ্য।

স্বাধীন বঙ্গভূমির ইতিকথাঃ
বাংলাদেশের দুটুকরো করে হিন্দুদের জন্য আলাদা স্বাধীন রাষ্ট্র গঠনের জন্য জোর তৎপরতা চলছে। বাংলাদেশের এক তৃতীয়াংশ ২০,০০০ বর্গমাইল এলাকা নিয়ে স্বাধীন বঙ্গভূমি গঠনের উদ্যোগ আয়োজন চলছে অনেকদিন  ইতিমধ্যেই ঘোষিত হয়েছে স্বাধীন বঙ্গভূমি সরকার। 
রাষ্ট্রপতিঃ পার্থ সামন্ত। 
রাজধানীঃ সামন্তনগর (মুক্তি ভবন)। 
সবুজ ও গৈরিক রঙের মাঝে সূর্যের ছবি নিয়ে নির্দিষ্ট হয়েছে জাতীয় পতাকা। 
জাতীয় সঙ্গীতঃ ধনধান্যে পুষ্পে ধরা, আমাদের এই বসুন্ধরা। 
সীমানাঃ উত্তরে পদ্মা, পূর্বে মেঘনা, পশ্চিমে ভারত, দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর। প্রস্তাবিত সীমানার মধ্যে পড়েছে বাংলাদেশের ছয়টি জেলাঃ খুলনা, যশোর, ফরিদপুর, কুষ্টিয়া, বরিশাল এবং পটুয়াখালী। 

এই ছয়টি জেলা নিয়েই ২৫ মার্চ ১৯৮২ ঘোষিত হয়েছে তথাকথিত স্বাধীন বঙ্গভূমি রাষ্ট্র। স্বাধীন বঙ্গভূমিকে বাস্তব রূপ দেওয়ার সমস্ত উদ্যোগই চলছে কিন্তু পশ্চিম বঙ্গ থেকে। নেপথ্য নায়করা সবাই জানেন এই রাজ্যেই বাংলাদেশ সীমান্ত বরাবর বিভিন্ন জেলা - ২৪ পরগনা, নদীয়া এবং উত্তর বাংলায় চলছে ব্যাপক তৎপরতা। সেসময় ভারতে রাজনৈতিক আশ্রয়ে থাকা কাদের (বাঘা) সিদ্দিকী এবং চিত্তরঞ্জন সূতার মদদ দিচ্ছেন হিন্দু রাষ্ট্রের পক্ষে। প্রবক্তাদের যুক্তি বাংলাদেশে মুসলমানদের শাসন চলছে। হিন্দুদের জীবন ও সম্পত্তি তাদের হাতে নিরাপদ নয়। বিশেষত বাংলাদেশকে মুসলিম রাষ্ট্র ঘোষনার পর ঐ দেশের হিন্দুরা পরাধীন জীবন যাপন করছে। তাই প্রয়োজন হিন্দুদের জন্য স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র-বঙ্গভূমি।

বঙ্গভূমি আন্দোলনের আনুষ্ঠানিক সংগঠক নিখিল বঙ্গ নাগরিক সংঘ। ১৯৭৭ সালের ১৫ আগস্ট কলকাতায় এই সংগঠনকির জন্ম হয়। জন্ম উপলক্ষে ১৫৯ গরফা মেইন রোডের সভায় নাকি উপস্থিত ছিলেন একজন আইএএস অফিসার অমিতাভ ঘোষ। অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ডাঃ কালিদাস বৈদ্য (এমবিবিএস ডাক্তার), সুব্রত চট্টোপাধ্যয় (বিলাত ফেরত ইঞ্জিনিয়ার), নীহারেন্দ্র দত্ত মজুমদার (পশ্চিম বাংলার প্রাক্তন আইনমন্ত্রী) এবং শরৎ চন্দ্র মজুমদার (বাংলাদেশের প্রাক্তন মন্ত্রী)। অন্য সূত্রের খবর চিত্তরঞ্জন সূতারও ঐ সভায় হাজির ছিলেন। ১৭ সেপ্টেম্বর সংস্থা গোলপার্কে সভা করে প্রথম প্রকাশ্যে হোমল্যাণ্ড দাবী করে। এরপর মাঝে মধ্যে সভা-সমাবেশ হত। এর মধ্যেই নিখিল বঙ্গ নাগরিক সংঘে ভাঙন ধরে। ১৯৭৯ সালে হয় দুটুকরো। ডাঃ কালিদাস বৈদ্যের নেতৃত্বাধীন নিখিল বঙ্গ নাগরিক সংঘের ঠিকানাঃ গরফা মেইন রোড। সুব্রত চ্যাটার্জির নেতৃত্বাধীন নিখিল বঙ্গ নাগরিক সংঘের ঠিকানাঃ ৮০ ধনদেবী মান্না রোড, নারকেলডাঙ্গা। এদের থেকে বেরিয়ে আর একটি অংশ তৈরী করে বঙ্গদেশ মুক্তিপরিষদ। ঠিকানা মছলন্দপুর। আরও একটি অংশ তৈরী করে সংখ্যালঘু কল্যাণ পরিষদ। চলে চিত্ত সুতারে ভবানীপুরের বাড়ী থেকে।

১৯৮২ সালে বঙ্গভূমি আন্দোলন একটা গুরুত্বপূর্ণ মোড় নেয়। ঐ বছরের ২৫শে মার্চ ঘোষিত হয় স্বাধীন বঙ্গভূমি রাষ্ট্র। তৈরী হয় সৈন্য বাহিনী বঙ্গসেনাসৈনাধ্যক্ষ ডাঃ কালিদাস বৈদ্য। সুব্রত চ্যাটার্জীর গ্রুপ ঐ ঘোষণা না মানলেও বঙ্গভূমি দখলের জন্য ঐ বছরেই তৈরী করে অ্যাকশন ফোরাম বাংলা লিবারেশন অর্গানাইজেশন (বিএলও)। আরও পরে বঙ্গদেশ মুক্তি পরিষদ তৈরী করে সৈন্য বাহিনী লিবারেশন টাইগার্স অব বেঙ্গল (বিএলটি)। নেতা রামেশ্বর পাশোয়ান একজন বিহারী, থাকেন গরফার রামলাল বাজারে। এরপর বিভিন্ন সংগঠন মাঝে মাঝেই বঙ্গভূমি দখলের ডাক দেয়। সীমান্ত অভিযান করে। কিন্তু কখনই ব্যাপারটা এদেশের মানুষের কাছে বিশেষ গুরুত্ব পায়নি। 

৮৮ এর জুলাই থেকে অবস্থাটা ধীরে ধীরে পাল্টাতে শুরু করে। ঐ বছর ২২ জুলাই বঙ্গসেনা একটি সম্মেলন করে। এরপরই শুরু হয় একের পর এক কর্মসূচী। সীমান্ত জেলাগুলোতে চলতে থাকে একের পর এক সমাবেশ মিছিল মিটিং। ২৩ নভেম্বর বঙ্গভূমি দখলের জন্য বনগাঁ সীমান্ত অভিযানে ৮/১০ হাজার লোক হয়। ২২-২৩ জানুয়ারী বনগাঁ থেকে বঙ্গসেনার মহড়া হয়। ২৪ মার্চ ও ২৫ মার্চ হয় আবার বঙ্গভূমি অভিযান। ৭ এপ্রিল রাজীব গান্ধীর কলকাতা আগমন উপলক্ষে সিধু কান ডহরে বিএলও এক জমায়েতের ডাক দেয়। প্রত্যেকটা কর্মসূচীতে ভাল লোক জড়ো হয়। বাংলাদেশে গেল গেল রব উঠে। এপারের সংবাদ মাধ্যমগুলো এই প্রথম গুরুত্ব সহকারে মনোনিবেশ করে খবর প্রচার করে।

স্বাধীন বঙ্গভূমি আন্দোলনের নেপথ্য নায়কদের আসল পরিচয় কি? কি তাদের আসল উদ্দেশ্য? কে এই রাষ্ট্রপতি পার্থ সামন্ত? কি ভূমিকা নিচ্ছেন ভারত সরকার?  দীর্ঘ অনুসন্ধানে এটা স্পষ্ট হয়েছে, স্বাধীন হিন্দুরাষ্ট্র তৈরীর চেষ্টা আজকের নয়। পঞ্চাশের দশকেই হয়েছিল এর ব্লুপ্রিন্ট। বঙ্গভূমি ও বঙ্গসেনা পুস্তিকায় ডাঃ কালিদাস বৈদ্য নিজেই স্বীকার করেছেন যে, ১৯৫২-তে তাঁরা তিনজন যুবক কলকাতা থেকে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে যান এবং সংখ্যালঘুদের মুক্তির জন্য ব্যাপক কর্মতৎপরতা চালান। গোপনে স্বাধীনতা ও তার সঙ্গে স্বতন্ত্র বাসভূমির কথাও প্রচার করেন। ঐ তিন যুবক হলেন কালিদাস বৈদ্য, চিত্তরঞ্জন সুতার এবং নীরদ মজুমদার (মৃত)। আর এই প্রেসিডেন্ট পার্থ সামন্তই হলে চিত্তরঞ্জন সূতার।

বাংলাদেশে বেশ কিছু কাগজে লেখা হয়েছে বঙ্গভূমি আন্দোলন ভারতেরই তৈরী। ৮ সালের জুলাই থেকেই বঙ্গভূমি আন্দোলন ধীরে ধীরে দানা বাধতে শুরু করে। এটা কি নেহাৎই কাকতালীয়? ১৯৮২ সালে যখন স্বাধীন বঙ্গভূমি সরকার ঘোষণা করা হয়েছিল, বাংলাদেশের কাগজগুলিতে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। মূল সুর ছিল, ইন্দিরার মদদেই এসব হচ্ছে।

প্রথম আন্দোলনের মূল হোতা ডাঃ কালিদাস বৈদ্য এবং রহস্যময় চরিত্র চিত্তরঞ্জন সূতার তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে এবং বাংলাদেশে বহুকাল ভারতের এজেন্ট হিসেবে কাজ করেছেন। পাকিস্তান ভেঙে বাংলাদেশ সৃষ্টির পিছনেও ছিল তাদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। বস্তুত ভারতীয় এজেন্ট হিসেবেই এই দুজন এবং নীরদ মজুমদার তৎকালীন পূর্ববঙ্গে গিয়েছিলেন। চিত্তবাবু ওখানে রাজনৈতিকভাবেও বিশেষ প্রভাবশালী হয়ে উঠেছিলেন মূলত তার ভারত সরকারের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য। সংসদের সদস্যও হয়েছিলেন।

ডাঃ বৈদ্য এতটা পারেননি। পরবর্তীকালে দুইজনের মধ্যে বিরোধও হয়। ডাঃ বৈদ্য ভারত সরকারের সমর্থন হারান। কিন্তু মুজিব সরকারের ওপর প্রভাব খাটাবার জন্য চিত্তরঞ্জন সূতারকে ভারত সরকার চিরকালই ব্যবহার করেছে।  অনেকেই বলে, তাঁর সোভিয়েত কানেকশন নাকি প্রবল। চিত্তবাবু ভবানীপুরের রাজেন্দ্র রোডের বিশাল বাড়িতে সপরিবারে অত্যন্ত বিলাসবহুল জীবনযাপন করেন। কোথা থেকে আসে ঐ টাকা? ভারত সরকার কেন তাকে জামাই আদরে পুষছেন? তার বসতবাড়িটাও দুর্ভেদ্যও। পাহারা দেন বেশকিছু শক্ত সমর্থ যুবক। যারা বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ করত। বনগাঁ লাইনে বঙ্গভূমি সমর্থকদের মধ্যে ব্যাপক প্রচার যে, ঐ বাড়িটাই বঙ্গসেনার ঘাঁটি। ভারত সরকারের মদদের আরও প্রমাণ, রাজীব গান্ধীর বিবৃতি। তিনি একাধিকবার বিবৃতি দিয়েছেন যে, বাংলাদেশে হিন্দুদের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হচ্ছে। বাড়ছে অনুপ্রবেশ। আকাশবাণী থেকেও একাধিকবার প্রচার হয়েছে। 

ভারত সরকারের সঙ্গে যোগাযোগের কথা ডাঃ বৈদ্যও অস্বীকার করেননি। তিনি বলেন, মদদ নয় প্রশ্রয় দিচ্ছে বলতে পারেন। তবে মদদ দিতেই হবে। আমরা জমি প্রস্তুত করছি। তিনি বলেন, আমি ভারত সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি, কিভাবে রাখছি, কার মাধ্যমে রাখছি বলব না। আমার বক্তব্য ক্রমাগতই তাদের বোঝাবার চেষ্টা করছি। সত্যিই যদি যথেষ্ট লোকজন জড় করতে পারি, তবে ভারত সরকারকে সৈন্যবাহিনী দিয়ে সাহায্য করতেই হবে। আমার একটা সরকার আছে। সৈন্যবাহিনী আছে। ভারতীয় সৈন্যবাহিনী বঙ্গসেনা নামেই ঢুকবে বাংলাদেশে। আমরা সেই পরিস্থিতি তৈরী করার চেষ্টা করছি। 

বঙ্গভূমি পন্থীরা চান বাংলাদেশের হিন্দুদের ওপর বাংলাদেশ সরকার ব্যাপক অত্যাচার চালাক। যাতে তারা দলে দলে সেখান থেকে পালিয়ে আসতে শুরু করে। শরণার্থীদের বোঝা বইতে হবে ভারত সরকারকে। ফলে বাধ্য হয়েই তাদের হস্তক্ষেপ করতে হবে। এজন্য বাংলাদেশে ঢাকাসহ বিভিন্ন বড় বড় শহরে কিছু অন্তর্ঘাতমূলক কাজ করার পরিকল্পনা রয়েছে। তাদের আরও একটা ইচ্ছা, বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা লাগুক, ব্যাপক হিন্দু নিধন হোক, যাতে এদেশের সংখ্যাগুরু হিন্দুদের সেন্টিমেন্টকে খুশী করার জন্য ভারত সরকার হস্তক্ষেপ করতে বাধ্য হয়।

বঙ্গভূমির ফেরিওয়ালাদের স্পষ্ট বক্তব্যঃ ভারত সরকারকে বেছে নিতে হবে দুটোর একটা। তারা দেড় কোটি হিন্দু শরণার্থীর দায়িত্ব নেবেন, নাকি স্বাধীন হিন্দুরাষ্ট্র বঙ্গভূমি তৈরী করে দেবেন, যে বঙ্গভূমি একটা প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে সিকিমের মত ভারতের অঙ্গরাজ্যে রূপান্তরিত হবে?"

তথ্যসূত্রঃ 
১- বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধঃ বহুমাত্রিক বিশ্লেষন / এম আই হোসেন 
২- Sheikh Mujib Triumph and Tragedy / Sayyid A. Karim
৩- একশ বছরের রাজনীতি/ আবুল আসাদ 
৪- দৈনিক ইত্তেফাক, ৪ জুন ২০১৩

মঙ্গলবার, ২০ অক্টোবর, ২০১৫

নিখিল বোমার উপাখ্যান


২৪ নভেম্বর যাত্রাবাড়ি ১৯৭৪
, ভয়ানক বিস্ফোরন হয় নিখিল নামে আলোচিত বোমার। সে বোমার জনক নিখিল রঞ্জন সাহা। বুয়েটের মেকানিক্যাল ডিপার্টমেন্টের তরুণ লেকচারার। জাসদ করতেন। ২৬ নভেম্বর হরতালকে কেন্দ্র করে দেশকে ব্যাপক অস্থিতিশীল করার পরিকল্পনা গ্রহন করে জাসদ। প্রচুর বোমা দরকার। কিন্তু বোমা বানাবে কে?

সেই গুরুদায়িত্ব গ্রহন করে নিখিল। নিখিল আগে থেকেই বোমা বানায়। পদ্ধতিও ছিল স্থুল। পাতলা এক টুকরো মার্কিন কাপড় চিনি দিয়ে ভিজিয়ে এবং পরে শুকিয়ে মাড় দেয়া কাপড়ের মত করে শক্ত করা হতো। এর ভেতর ধাতব স্প্রিন্টার ঢুকিয়ে দেয়া হতো। তারপর মেশানো হতো পটাশিয়াম ক্লোরেট। জ্যাকেটের মধ্যে কয়েকটা ফোকর রাখা হতো। প্রতিটি ফোকরে অ্যম্পুলের ভেতর থাকতো সালফিউরিক এসিড। এটা ডেটোনেটরের কাজ করতো।

সলতের মধ্যে আগুন লাগিয়ে ছূড়ে দিলে তৎক্ষণাৎ কাজ করতো। আর যদি টাইম বোমা বানানোর প্রয়োজন পড়তো তবে বেলুন বা কনডম ব্যবহার করা হতো। সেক্ষেত্রে অ্যম্পুলগুলো বেলুনে রাখা হতো। হিসেব করে দেখা গেল বেলুন থেকে গড়িয়ে এসিড বেরিয়ে আসতে দু'মিনিট সময় লাগে। যদি মনে করা হতো দু'মিনিট পর বিস্ফোরন করা লাগবে তাহলে একটা বেলুন যদি চার মিনিট তাহলে দুটো বেলুন ব্যবহার করা হতো।

নিখিল তার দুই সহযোগী কাইয়ুম আর নয়নকে নিয়ে বোমা তৈরী করে যাচ্ছিল। হঠাৎ ভুলবশত একটি বোমা বিস্ফোরিত হয়। এরপর তৈরী হয়ে যাওয়া একে একে অনেকগুলো। কাইয়ুম ঘটনাস্থলেই মৃত্যুবরণ করে। মারাত্মক আহত হয় নিখিল। নয়ন নিখিলকে নিয়ে হাসপাতালে যায়।

মাইনুদ্দিন খান বাদল পরদিন তাকে দেখতে যায়। নিখিল জানায় পুলিশের তার ডায়েরী পেয়েছে। তাই বাদলকে সরে থাকতে বলেছেন। এর পরদিন নিখিল মৃত্যুবরণ করে। নিখিল হতে অনেক গুরুত্বপূর্ণ কথা পুলিশের কাছে চলে যাবে তাই জাসদই তাকে হাসপাতালে খুন করায় বিষ প্রয়োগ করে।
নিখিলের আলোচিত সৃষ্টি এবং যাদের জন্য সৃষ্টি তারাই হত্যা করে নিখিলকে। এভাবেই মৃত্যুবরণ করে নিখিল ও নিখিলের হতদরিদ্র খেতমজুর বাবার পরিবারের স্বপ্ন। নিখিলদের বাড়ি ছিল ব্রাহ্মণবাড়িয়া জিলার নবীনগর থানার বিটনগর গ্রামে।

আরেক সহকর্মী কাইয়ুম পলাশী কলোনীতে থাকতেন। রেডিওতে খবর শুনে তার মা যাত্রাবাড়ির গফুর মেম্বারের বাড়ির কাছে যান। কাইয়ুমের বাবা সরকারি চাকুরী করতেন, থাকতেনও সরকারি কোয়ার্টারে। কাইয়ুমের মা মানুষের জটলার মধ্যে দাঁড়িয়ে তার ছেলেকে দেখেছিলেন। কিন্তু কাইয়ুমের বাবার চাকরী ও কোয়ার্টার নিয়ে ঝামেলা হতে পারে এজন্য নিজের ছেলে বলে পরিচয় দেয়ার সাহস পাননি। জাসদের পক্ষ থেকেও কেউ যে এগিয়ে আসবে এমন কাউকে পাওয়া যায়নি।

অতঃপর আঞ্জুমানে মফিদুল ইসলামের তত্ত্বাবধানে তার লাশ বেওয়ারিশ হিসেবে দাফন করা হয়। এভাবেই শেষ হয় সে সময়ের স্বৈরাচারী মুজিব সরকারের ভিত কাঁপিয়ে দেয়া নিখিল বোমার উপাখ্যান।   

তথ্যসূত্রঃ-
১-জাসদের উত্থান পতনঃ অস্থির সময়ের রাজনীতি/ মহিউদ্দিন আহমদ 
২- দৈনিক ইত্তেফাক ২৬, ২৭, ২৮ ও ২৯ ডিসেম্বর।


রবিবার, ১৮ অক্টোবর, ২০১৫

তাজউদ্দিন নামা


বাংলাদেশের মানুষ সাধারণত ধর্মপ্রিয়। এখানে তাই বামদের ভালো অবস্থান কখনোই হয়নি। তারা তাই ছলে বলে কৌশলে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করতে চেয়েছে। বাংলাদেশের সাথে পাকিস্তানী সামরিক জান্তাদের স্বৈরাচারীর কারনে সৃষ্টি হওয়া দূরত্বকে কাজে লাগিয়ে সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করার স্বপ্নে বিভোর ছিল। তাদের এই স্বপ্নকে কাজে লাগিয়েছে ভারত। ভারত ৭১ এর আগে পরাজিত হওয়া যুদ্ধের শোধ নিতে মরিয়া ছিল। আর তাছাড়া আজন্মশত্রু দেশকে বিপদে ফেলা তাদের গুরুত্বপূর্ণ প্রজেক্ট ছিল। ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা “র” এর প্রথম প্রজেক্ট ছিল পাকিস্তান ভাগ। 

ভারত এদেশীয় রুশপন্থী বামদের কাজে লাগিয়ে তাদের সেই প্রজেক্ট বাস্তবায়ন করে। আওয়ামীলীগে লুকিয়ে থাকা সিরাজুল আলম খান ছিলেন এই প্রজেক্ট বাস্তবায়নের মূল হোতা। তিনি একেক পর এক ছাত্রলীগের নানান কর্মকান্ড দিয়ে পাকিস্তান ভাগের জন্য মুজিবকে প্ররোচিত করতে থাকেন। কিন্তু মুজিব পাকিস্তান ভাগের ব্যাপারে একেবারেই অমত করেছিলেন। 

অমত না করার কোন কারণও নেই। কারণ সত্তরের নির্বাচনে “ভোটের বাক্সে লাথি মার/ বাংলাদেশ স্বাধীন করো” বলে শ্লোগান তুলে চীনপন্থী বাম নেতা ভাসানী তার রাজনৈতিক ক্যরিয়ার, জনগণের আস্থা সবই নষ্ট করেছেন। এর বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে মুজিবের ব্যাপক জনসমর্থন বাড়ে। মুজিব জনগণের পালস বুজতে পেরেছেন। তাই বামদের ফাঁদে পা দেননি। আর তাছাড়া গনতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হলে মুজিবের জন্যই লাভ, তার পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে। পাকিস্তানে যে অল্পকয়দিন গনতন্ত্র ছিল তার বেশিরভাগ সময়ে ক্ষমতায় ছিল বাঙ্গালীরাই।

এবার আসি তাজউদ্দিন প্রসঙ্গে। বেসিক্যলি তাজউদ্দিন সাহেব রুশপন্থী বাম ছিলেন। এই ব্যাপারে কমরেড তোয়াহা বলেন, এছাড়া তাজউদ্দীন পূর্বাপর কমিউনিস্ট পার্টির সাথে সংশ্লিষ্ট ছিলেন। যদিও তাজউদ্দীন বাহ্যত: আওয়ামী লীগ করতেন কিন্তু প্রকৃতপক্ষে আমাদের সাথেই জড়িত ছিলেন। পার্টির সিদ্ধান্তেই তাকে আওয়ামী লীগে রাখা হয়। একবার সম্ভবত: '৬২ সালের দিকে তিনি জেল থেকে বের হয়ে আমাদের বললেন 'আর ছদ্মনামে (অর্থাৎ আওয়ামী লীগে) কাজ করতে আমার ভালো লাগছে না। আমি নিজ পার্টিতেই কাজ করবো।' তখন কেউ কেউ মনে করলো, 'থাক না আমাদের একজন আওয়ামী লীগে আছে, সেখানেই কাজ করুক না।' পরে অবশ্য পার্টিতে এ নিয়ে আলোচনাও হয়েছিল কিন্তু তাজউদ্দীনকে প্রত্যক্ষভাবে পার্টিতে নেয়া হয়নি। আমার মতে সেটা ছিল ভুল সিদ্ধান্ত। তবে তাজউদ্দিন আওয়ামী লীগে থেকেও আমাদের জন্য কাজ করেছেন। আওয়ামী লীগের সব তথ্য আমাদের সরবরাহ করেছেন। ইন্ডিয়াতে গিয়ে অসম-চুক্তি করার পরই তার মাঝে একটা বিক্ষিপ্তভাব এসে যায়। এরপর তিনি কিছুটা যেন কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়েন। তবে, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর যখন আমরা তাকে তাঁবেদার সরকারের প্রধানমন্ত্রী মনে করতাম, তখনও তিনি আমাদের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করেছেন। (বারান্দার দিকে অঙ্গুলি নির্দেশ করে) প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে একবার এ বারান্দায় বসে আমার সাথে আলাপ করে গেছেন। ভুল-শুদ্ধ যখন যা করেছেন সবই এসে আমাদের কাছে অকপটে বলেছেন।
তথ্যসূত্রঃ ভাষা আন্দোলন : সাতচল্লিশ থেকে বায়ান্ন / মোস্তফা কামাল

১৯৭১ সালে তার কাজ ছিল কেবল ইন্ডিয়ান এজেন্ডা বাস্তবায়ন করা। উপপ্রেসিডেন্ট নজরুল ইসলামকে দিয়ে অসম ৭ দফা চুক্তি করে বাংলাদেশ বিক্রীর ব্যবস্থা করে ভারতে নিশ্চিন্ত জীবন যাপন করেছেন। এই বিষয়ে ৯ নং সেক্টর কমান্ডার মেজর আবদুল জলিল বলেছেন দেশের শান্তিপ্রিয় জনগনকে হিংস্র দানবের মুখে ঠেলে দিয়ে কোলকাতার বালিগঞ্জে একটি আবাসিক এলাকার দোতলা বাসায় প্রধানমন্ত্রী তার মন্ত্রীসভা সহকারে নিরাপদে তাস খেলছিলেন দেখে আমি শুধুই বিস্মিত হইনি, মনে মনে বলেছিলাম ধরনী দ্বিধা হও। 
তথ্যসূত্রঃ অরক্ষিত স্বাধীনতাই পরাধীনতা/ মেজর জলিল, পৃঃ ৪৪

১৭ই এপ্রিল নতুন প্রবাসী সরকার গঠনের ঘোষনা দিয়ে দেশের মানুষকে বিপদের মুখে ঠেলে দিয়ে তিনি কিভাবে নিশ্চিন্ত ছিলেন তা আমরা বুঝতে পারবো যদি ভারত সরকারের সাথে তার চুক্তিগুলো একটু পড়ি। 

১- মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে যারা যুদ্ধ করেছে তারাই দেশ স্বাধীন হলে প্রশাসনে নিয়োগ পাবে। বাকীরা চাকরীচ্যুত হবে। যে শূন্যপদ সৃষ্টি হবে তা ভারতীয় প্রশাসনিক কর্মকর্তা দ্বারা পূরণ করা হবে।

২- বাংলাদেশ ও ভারতের সশস্ত্র বাহিনী মিলে যৌথ কমান্ড গঠন করে যুদ্ধ পরিচালনা করা হবে। ভারতের সেনাপ্রধান উক্ত যৌথ কমান্ডের প্রধান হবেন। তার কমান্ড অনুসারেই যুদ্ধে শামিল হওয়া বা যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।

৩- স্বাধীন বাংলাদেশের কোন নিজস্ব সশস্ত্র বাহিনী থাকবেনা।

৪- আভ্যন্তরীন আইন-শৃংখলা রক্ষার জন্য মুক্তিবাহিনীকে কেন্দ্র করে প্যারামিলিটারি বাহিনী প্রতিষ্ঠা করা হবে।

৫- দুই দেশের মধ্যে মুক্ত বাজার ব্যবস্থা গড়ে তোলা হবে। কিন্তু সময়ে সময়ে আলাপ আলোচনার মাধ্যমে বানিজ্য নীতি নির্ধারণ করা হবে।

৬- বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ভারতীয় সেনাবাহিনী অনির্ধারিত সময়ের জন্য বাংলাদেশে অবস্থান করা হবে।

৭- বাংলাদেশ ও ভারত উভয় দেশ আলোচনা করে একই ধরণের পররাষ্ট্র নীতি ঠিক করবে।
তথ্যসূত্রঃ বাংলাদেশে স্বাধীনতা যুদ্ধে "র" এবং "সি আই এ"/ মাসুদুল হক, পৃঃ ৮১

তাজউদ্দিন আহমদ এ চুক্তি স্বাক্ষর করার জন্য চাপ দিতে থাকেন সৈয়দ নজরুল ইসলামকে। নজরুল ইসলাম সাহেব নিরুপায় হয়ে এই চুক্তি স্বাক্ষর করে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন।
তথ্যসূত্রঃ বাংলাদেশে 'র'/ আবু রুশদ
দুঃসময়ের কথাচিত্র সরাসরি/ ড. মাহবুবুল্লাহ ও আফতাব আহমেদ।

ভারতপ্রীতি তাজউদ্দিনকে প্রায় অন্ধ করে ফেলেছিল। সে কি আসলে আলাদা রাষ্ট্র চেয়েছিল নাকি ভারতের তত্ত্বাবধানে কোন অঙ্গরাজ্য চেয়েছিল এটা সহজেই অনুমান করা যায় তার কার্যক্রম দেখে। ১৯৭২ সালের ১লা জানুয়ারি এক আদেশবলে বাংলাদেশের মুদ্রামান ৬৬ ভাগ হ্রাস করা হয়। অথচ সে সময় বাংলাদেশের মুদ্রামান ছিল ভারত থেকে বেশি। তাজউদ্দীন দু'দেশের মুদ্রামানের বিনিময় হারের সমতা চেয়েছিলেন। লাগামহীন মুদ্রাস্ফীতির ফলে দ্রব্যমূল্য বেড়ে গিয়েছিল হু হু করে। অর্থনীতির ওপরও প্রভাব পড়েছিল। ৭৩- ৭৪এ দূর্ভিক্ষ দেখা দিয়েছিল। যদিও দূর্ভিক্ষের পারিপার্শ্বিক অনেক কারণ ছিল, তবে এটাও বড় একটি কারণ। 
তথ্যসূত্রঃ
ভয় পেয়ে রিপোর্ট করা থেকে বিরত থাকলাম/২২ মার্চ ২০১৬ মতিউর রহমান চৌধুরী/ দৈনিক মানবজমিন

৭১ এর পুরো বিষয়টা অনুধাবন করতে শেখ মুজিবের সময় লাগেনি। দেশে এসে ক্ষমতা গ্রহন করেই উপরোক্ত চুক্তি ভেঙ্গে দেয়ার চেষ্টা করেন। তিনি বিশ্বাস হারিয়ে ফেলেন তাজউদ্দিনের প্রতি। যে কয়টা দিন মুজিব ক্ষমতায় ছিলেন সে কয়টা বছর তাজউদ্দিন শেখ মুজিবের কাছে ঘেঁষতে পারেনি। তাজউদ্দিনের উপর আস্থা হারিয়ে ফেলে রুশপন্থী সমাজতন্ত্রীরাও। আওয়ামীলীগে ঘাপটি মেরে থাকা বামরা মুজিবের অপশাসনে ও অত্যাচারে বিরক্ত হয়ে আরেকটি সংগঠন জাসদ গঠন করার সময় তাজউদ্দিনের বাড়িতে সিরাজুল আলম খানের নেতৃত্বে গোপন আলোচনায় বসেন। সেখানে তাজউদ্দিন মুজিবের বিরুদ্ধে যেতে সাহস করেনি। বলেছিল আমি মুজিবের বিরুদ্ধে যেতে পারবোনা, আমার সেই সাহস নেই। তবে তোমাদের আমি সর্বাত্মক সাহায্য করবো। 

এরপর জাসদ গঠন হলো। জাসদের উপর মুজিবের নির্যাতন ক্রমেই সকল সীমা অতিক্রম করছিলো। এছাড়া রক্ষীবাহিনীর অত্যাচার, জুলুম, সন্ত্রাসী জনগণকে মুজিবের বিরুদ্ধে ক্ষেপিয়ে তুলে। তাই একমাত্র বিরোধী হিসেবে জাসদের জনপ্রিয়তা বাড়তে থাকে। জাসদের উত্থানে আরো ভয়ানকভাবে ক্ষেপে গিয়ে মুজিব জাসদের উপর অত্যাচারের স্টীমরোলার চালাতে থাকেন। জাসদ এসব কিছুর পেছনে তাজউদ্দিনকে সন্দেহ করে। সেনাবাহিনী, জনতা, জাসদ এই ত্রিপক্ষীয় জনরোষে মুজিব হত্যার ষড়যন্ত্র দানা বাঁধতে থাকে। এরই ফলশ্রুতিতে ৭৫ সালে খুন হন মুজিব। সেই সাথে নির্মমভাবে খুন হন তাজউদ্দিনসহ চার নেতা। বামপন্থী সেনা অফিসাররাই খুন করে বাম চিরজীবন আদর্শ লালন করা তাজউদ্দিনকে। 
তথ্যসূত্রঃ জাসদের উত্থানপতনঃ অস্থির সময়ের রাজনীতি / মহিউদ্দিন আহমদ।

রবিবার, ১১ অক্টোবর, ২০১৫

রুপকথা নয় সত্যকথাঃ ০১


দানশীলতার জন্য তাঁর ছিল বেশ সুনাম। একদিন তিনি স্বপ্নে দেখলেন একস্থানে উটের দুধ আর অন্যস্থানে বিষ্ঠা। এর মাঝামাঝি স্থানে কে যেন কোদাল দিয়ে খনন করছে। তাতে একটা কূপ দেখা গেল। সেখানে কেবল পানি আর পানি। তিনি ঘুম থেকে উঠলেন কিন্তু স্বপ্নের আগাগোড়া কিছুই বুঝলেন না। একই ভাবে তিনদিন স্বপ্নে দেখলেন।
তারপর তিনি এক গণকের কাছে গেলেন। গণক বললেন তোমার জন্য সম্মান অপেক্ষা করছে। তুমি সম্মানিত হবে। এর কিছুদিন পর তিনি উটের পাল নিয়ে বরাবরের মত মাঠে গেলেন। হঠাৎ একটা তীর কোথা থেকে এসে একটা উটের ওলানে গিয়ে পড়লো। দুধে ভেসে গেলো ঐ স্থান। কে তীর মারলো তিনি আর সেই চিন্তা করতে গেলেন না। তার মনে পড়ে গেলো স্বপ্নের কথা।
তিনি খেয়াল করলেন কিছুদূরে বিষ্ঠা রয়েছে। যা ঐ উট একটু আগে ত্যাগ করেছে। তিনি বুঝলেন স্বপ্নই সত্য। এখানেই পানি পাওয়া যাবে। তাঁর হাতের লাঠি দিয়ে স্থানটি চিহ্নিত করে তিনি ছুটলেন বাড়ির দিকে। কোদাল নিয়ে এসে খনন করতে লাগলেন। অল্প কিছু খনন করার পরই পাওয়া গেলো কূপটি। তিনি চিৎকার করে জানিয়ে দিলেন সবাইকে। তোমাদের আর চিন্তার কিছু নেই। আমাদের পানি সমস্যা দূর হয়ে গেলো।
এই সম্মানিত ব্যাক্তির নাম আব্দুল মুত্তালিব। আর কূপটি ইসমাইল আঃ এর জমজম কূপ। যা এতদিন পাথর দ্বারা ঢাকা পড়ে ছিল। আব্দুল মুত্তালিব কূপটিকে সুন্দর করে বাঁধিয়ে দিলেন। কূপটা সবার জন্য উন্মুক্ত করে দিলেন যাতে সবাই পানি নিতে পারে।
এদিকে কিছু স্বার্থবাদী কুরাইশ নেতা কূপের মালিকানা দাবী করে বসলো। এই নিয়ে অনেক ঝগড়া-বাকবিতন্ডা শুরু হলো। পরে সবাই সিদ্ধান্ত নিলো ইরাকের বনু সা’দ গোত্রের এক মহিলা জ্যোতিষীর কাছে যাবে। তিনি যা সিদ্ধান্ত দিবেন তাই সবাই মেনে নিবেন।
আব্দুল মুত্তালিব সহ মালিকানা দাবীদাররা রওনা হলো। কিছুদূর যাওয়ার পর তারা মুরুভূমিতে পথ হারিয়ে ফেললো। তাদের কাছে ছয় দিনের খাবার ছিল। দশ দিনে সব খাবার শেষ হলো। এরপর একজন প্রস্তাব করলো আমাদের তো মৃত্যু ছাড়া অন্যকোন গতি নেই। আসো সবাই কবর খুঁড়ে শুয়ে পড়ি। সবাই কবর খুঁড়ে মৃত্যুর জন্য অপেক্ষা করতে থাকলো।
আব্দুল মুত্তালিব তাদের বোঝালো, এভাবে শেষ হওয়া যাবেনা। আমাদের যতক্ষন পর্যন্ত শক্তি থাকবে ততক্ষন পর্যন্ত বাঁচার চেষ্টা করবো। তাছাড়া আমাদের কাছে তো উট রয়েছেই। আমরা তো সেগুলো খেয়েও বাঁচতে পারবো। তারপর তারা নির্দিষ্ট দূরত্বে অবস্থান করে প্রত্যেকে আলাদাভাবে পানি খুঁজতে লাগলো। এভাবে দুদিন যাওয়ার পর আব্দুল মুত্তালিব একটি পরিত্যাক্ত কূপের সন্ধান পায়।
তাদের প্রত্যেকটি উটই ছিল মৃতপ্রায়। উটগুলো ও তারা পানি পেয়ে আবার কর্মক্ষমতা ফিরে পায়। নতুন করে বাঁচার আশা দেখতে পায়। এই সময় সব কুরাইশ নেতা জমজম কূপের ব্যাপারে নিজেদের দাবী ছেড়ে দেয়। তারা বলে হে আবদুল মুত্তালিব, খোদাই আমাদের বিরুদ্ধে এবং তোমার স্বপক্ষে ফয়সালা দিয়েছেন। খোদার কসম এখন আর জমজম নিয়ে তোমার সাথে ঝগড়া করবোনা। যে খোদা এই মুরুভূমিতে তোমাকে পানি দিয়েছেন, সেই খোদাই তোমাকে জমজম দিয়ছেন।
এরপর তারা এক বানিজ্য কাফেলার সন্ধান পায় ও মক্কায় ফিরে আসে। এই ঘটনার পর আব্দুল মুত্তালিব আল্লাহকে খুশি করার জন্য নিজের এক ছেলেকে কোরবানী করার মানত করেন। তিনি তার দশ ছেলের সবাইকে কথাটা জানালেন। সবাই মেনে নিলো। এরপর তিনি দশ জনের নাম লিখে হোবাল মুর্তির তত্ত্বাবধায়কের কাছে দিলেন। তিনি লটারী করলেন দেখলেন ৪র্থ ছেলে আবদুল্লাহর নাম উঠেছে। 
আবদুল্লাহ ছিলেন আব্দুল মুত্তালিবের ছেলেদের মধ্যে সবচেয়ে দানশীল, সজ্জন, পরোপকারী। মক্কাবাসীরা সবাই তাকে ভালোবাসতো। তারা ওর কোরবানী মেনে নিতে পারে নি। সবাই আবারো লটারী করতে বললো, ২য় এবং ৩য় বারেও আবদুল্লাহর নাম উঠলো। সবাই আবারো বাধা দিল। সবচেয়ে বেশী বাধা দিল সহোদর আবু তালিব।

এরপর আব্দুল মুত্তালিব এক খ্রীস্টান মহিলা সাধকের কাছে গেলেন এবং সব খুলে বললেন। তিনি তাকে বললেন তুমি আবদুল্লাহর নাম ও দশটি উট লিখে লটারী কর। যদি আবদুল্লাহর নাম না উঠে তাহলে দশটি উট উঠে তবে দশটি উট আবদুল্লাহর বদলে কোরবানী করবে। আর যদি আবদুল্লার নাম উঠে তবে দশটি করে উট বাড়াতে থাকবে। যতক্ষন পর্যন্ত না আল্লাহ তায়ালা খুশি হন।
দশটি উটে কাজ হলোনা। বিশটি কিংবা পঞ্চাশটিতেও না। যখন আবদুল্লাহর নামের সাথে একশো উট লিখে লটারী করা হলো তখনই কেবল লটারীতে একশ উট উঠলো। মক্কাবাসীরা খুশীতে উল্লাস করতে লাগলো। আবদুল্লাহ নিশ্চিত যবাইয়ের হাত হতে আল্লাহর ইচ্ছায় বেঁচে গেলেন।
আব্দুল মুত্তালিব একশো উট জবাই করে সবার উদ্দেশ্যে রেখে দেন। সবাই যার যার ইচ্ছেমত নিয়ে যায়। তারপরও শেষ হয়নি। অন্যান্য মাংশাসী পশুরও ভুরিভোজের ব্যবস্থা হয়েছিল।
সেদিন হতে রক্তঋনের পরিমাণ হিসেবে একশো উট নির্ধারিত হলো। এর আগে ১০ টি উট ছিল। ইসলামেও এটি অব্যাহত আছে। আমাদের প্রিয় নবী মুহাম্মদ (সঃ) বলতেন আমি দুই যবীহর (যবাইকৃত) সন্তান।
তথ্যসূত্রঃ 
১. ইবনে হিশাম
২. মুখতাছার সীরাতে রাসূল 
৩. আর রাহীকূল মাখতুম 
৪. সীরাতে সরওয়ারে আলম

শনিবার, ১০ অক্টোবর, ২০১৫

সমাজে কিভাবে ইসলাম প্রতিষ্ঠিত হবে?


আমাদের সমাজে ইসলামপন্থীদের মাঝে এক ধরণের অবাস্তব কল্পনা বিলাস আছে। আর তা হল শুধুমাত্র সব ইসলামপন্থিরা এক প্লাটফর্মে এলেই অথবা তাদের মধ্যে ঐক্য প্রতিষ্ঠিত হলে সমাজে ইসলাম প্রতিষ্ঠিত হবে।

কথাটা পুরোপুরি ঠিক নয়। এরকম একটা ধারণা থেকে পাকিস্তানের উদ্ভব হয়েছে। অথচ দেখুন সেখানে ইসলামের বিজয় হয় নি, বিজয় হয়েছে জাতীয়তাবাদের।

১ম বিষয় হচ্ছে যোগ্যতা। একটি ইসলামী রাষ্ট্রের জন্য প্রথমত যেটা জরুরী তা হল ঐ রাষ্ট্র বা জনপদকে ইসলাম মোতাবেক চালানোর জন্য একদল সেক্টরভিত্তিক যোগ্য লোক তৈরী করা। যারা আল্লাহর সার্বভৌমত্ব ও জনগণের প্রতিনিধিত্ব ভিত্তিক রাষ্ট্র চালাতে পারবে। আল্লাহর রাসূল মক্কায় অগ্নিপরীক্ষার মাধ্যমে এই ধরণের যোগ্যতা সম্পন্ন লোক তৈরী করেছেন। 

২য় বিষয় হল বৃহৎ জনগোষ্ঠীর মানসিকতা পরিবর্তন করা। যাতে তারা ইসলামের শাসন ও অনুশাসন মেনে নেয়ার জন্য প্রস্তুত থাকে। বাংলাদেশের বেশীরভাগ মানুষ আল্লাহ ও তার রাসূলকে (সঃ) মনে প্রাণে বিশ্বাস করে ও মানে। তবে আল্লাহ্‌র সার্বভৌমত্ব মানতে তারা এখনো অভ্যস্ত হয় নি। এই ধরণের জনগোষ্ঠী মদিনায় তৈরী হয়েছিল। 

৩য় বিষয় হল নেতা হবেন আদর্শের মডেল। অর্থাৎ যাদের নেতৃত্বে ইসলাম প্রতিষ্ঠিত হবে তারা হতে হবে ইসলামের মডেল। তাদের দেখে জনগণ ইসলাম শিখবে। তাদের জীবনাচরণের সাথে যদি ইসলামের সামান্যতম প্রার্থ্যক্যও থাকে তাহলে তা জনগণের উপর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে অনেকখানি। আল্লাহর রাসূল সঃ স্বয়ং নিজেই মডেল হিসেবে উপস্থাপিতহয়েছেন। সেই সাথে ছিল সাহাবাদের উন্নত চরিত্র। 

এই তিনটি বিষয় নিশ্চিত হলে তবেই আল্লাহ তায়ালা আমাদের ইসলামী রাষ্ট্র দিবেন। মক্কায় ২য় বিষয়টি অর্জিত হয়নি বিধায় প্রথমেই মক্কায় ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হতে পারেনি। আল্লাহর রাসূল সঃ মক্কা থেকে যোগ্য নেতৃত্ব সহ মদিনায় গিয়ে তিনটি বিষয়ের সমন্বয় করাতেই সেখানে ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা সম্ভব হয়েছে। 

এখানে শর্টকাট কোন ওয়ে নেই যে আপনি হুট করে ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত করবেন। জিন্নাহ যখন দ্বিজাতিতত্ত্ব ঘোষনা করেছিলেন তখন এক সেমিনারে তাকে প্রশ্ন করা হয়েছিলো পাকিস্তানের সংবিধান কি হবে। সে দ্রুত পকেট হতে একটি ছোট কুরআন শরীফ বের করে অত্যন্ত আবেগ মেখে বলেছিলো এটিই হবে পাকিস্তানের সংবিধান। অথচ দেখুন আজও কি হয়েছে সেখানে কুরআনের সংবিধান? হয় নি। কারণ কুরআনকে সংবিধানে রূপ দেয়ার মত যোগ্যতা তার বা তার মন্ত্রীসভার কারো ছিল না।

ইসলামপন্থীদের জন্যতো বটেই, সবার জন্যই ঐক্য একটা বড় শক্তি। ঐক্য থাকলে আমাদের অনেক কাজ সহজ হয়ে যায়। তবে ঐক্য হওয়া উচিত আল্লাহর জন্য। দ্বীনের জন্য। জাতীয়তাবাদের ঐক্য নয়। সঠিক পন্থায় ঐক্যের জন্য যোগ্যতা দরকার। আমাদের মধ্যে অনেক মতপার্থক্য থাকে। আমরা যদি একটু ধৈর্য্য ধরে অপরের কথা শুনি, অপরের মতামত শুনি, খুব শালীন ভাষায় দ্বিমত করি বা নিজের মতামত উপস্থাপন করি তাহলেই নিজেদের সমস্যাগুলো কেটে যায়। কোন সম্প্রদায়কে ম্যনশন দোষারোপ করা ঐক্যের জন্য ভয়ানক হুমকি।

আসুন যোগ্যতা অর্জনের চেষ্টা করি। নিজ নিজ সেক্টরে অথবা আমাদের ইন্টারেস্টের জায়গাগুলোতে আমরাই যাতে নেতৃত্ব দিতে পারি সেই ব্যবস্থা আমাদেরই করতে হবে। এভাবেই একদিন ইসলাম নেতৃত্বের আসনে আসীন হবে ইনশাআল্লাহ। 

আর সেই সাথে আমাদের সবার কমন দায়িত্ব, আমরা আমাদের যার যার অবস্থান হতে আমাদের দাওয়াতকে আরো গতিশীল করবো। মানুষকে আল্লাহ্‌র সার্বভৌমত্বের দিকে আহ্বান করবো। আল্লাহ তায়ালা আমাদের সমগ্র প্রচেষ্টা কে কবুল করে নিন। আমিন।