দ্বিজাতি তত্ত্বের উপর ভিত্তি করে পাকিস্তানের জন্ম হয়। জামায়াতের প্রতিষ্ঠাতা সাইয়্যেদ মওদুদী রঃ এই বিষয়টার বিরোধীতা করেন। অনেকে মনে করেন তিনি পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার বিরোধীতা করেন। মূলত বিষয়টা তা নয়। জিন্নাহসহ মুসলিম লীগ প্রচার করে তারা মদীনা রাষ্ট্রের মত করে ইসলামিক রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা করবেন। মদীনাতে যেভাবে মক্কা থেকে সবাই এসে রাষ্ট্র কায়েম করেছে ঠিক তেমনি সারা ভারতবর্ষ থেকে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ অঞ্চলে একত্র হয়ে রাষ্ট্র কায়েম হবে। এখানে কুরআন হবে সংবিধান। বেসিক্যলি মওদুদী সাহেব এখানে বিরোধীতা করেন তিনি বলেন জাতীয়তাবাদী চেতনা দিয়ে ইসলাম প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়। [১,২]
জিন্নাহ সাহেবেরা মুসলিম জাতীয়তাবাদ দিয়ে ইসলাম প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছেন। এভাবে ইসলাম প্রতিষ্ঠা হয় না। মূলত কিভাবে ইসলাম প্রতিষ্ঠা করতে হয় তা নিয়ে তিনি একটি লেকচার দেন যা বই আকারে প্রকাশিত হয় “ইসলামী হুকুমাত কিস্তারা কায়েম হতি হায়” যা আমরা পড়ি ইসলামী বিপ্লবের পথ।
১৯৪৭ সালে ইংরেজরাও চেয়েছিলো ভারত ভেঙ্গে যাক। তাহলে তাদের ডিভাইড এন্ড রুল খেলতে ভালো হবে। ১৯০ বছরের দুঃশাসন ও শোষন ভুলাতে এটা ছাড়া তাদের বিকল্প ছিল না। তাই তারা মুসলিমদের দাবীকে গুরুত্ব দিয়ে ভারতকে দু’ভাগ করে এবং এতে পাকিস্তানের উদ্ভব হয়। আর ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ লেগে যায়। দাঙ্গার সৃষ্টি হয়। কিছুদিন আগেই যাদের শত্রু ছিল ইংল্যান্ড এখন তাদের শত্রু পরিবর্তন হয়ে যায়। ভারতের শত্রু হয় পাকিস্তান আর পাকিস্তানের ভারত। আর ইংল্যান্ড উভয়ের মোড়ল বা অভিভাবকের ভূমিকায় অবতীর্ন হয়।
যাই হোক পাকিস্তান সৃষ্টি হয়। কাশ্মীর নিয়ে যুদ্ধ শুরু হয় দুই দেশের মধ্যে। ভারত আয়তনে বড় হলেও পূর্ব পাকিস্তান ও পশ্চিম পাকিস্তান দ্বারা ভারতের মূল ভূখন্ড ঘেরাওয়ের মধ্যে পড়ে যায়। যুদ্ধাবস্থায় এই বিষয়টি পাকিস্তানের অনুকূলে আসে। এক বছরের অধিক সময় ধরে যুদ্ধ চলে। উভয় দেশের অনেক ক্ষতি সাধিত হয়। সাময়িক সমজোতার মাধ্যমে যুদ্ধের অবসান হয়। তখন থেকেই পূর্ব পাকিস্তানকে আলাদা করার পরিকল্পনা করে ভারত। তাহলে ভারতকে আর পাকিস্তান দ্বারা বেষ্টিত থাকতে হয় না।
পাকিস্তানের প্রথম গভর্ণর জেনারেল ছিলেন জিন্নাহ। তার প্রধানমন্ত্রী ছিলেন লিয়াকত আলী খান। ১৯৪৮ সাল থেকেই জামায়াত ইসলামী সরকার এবং ইসলামী সংবিধানের জন্য আন্দোলন করতে থাকে। জামায়াত ইসলামী সংবিধানের রূপরেখা তৈরী করে এবং এই রূপরেখা গ্রহনের আহ্বান জানায়। ১৯৪৮ সালে সাইয়্যেদ মওদুদী রঃ সহ অনেকে গ্রেপ্তার হন। এতে আন্দোলন দমে যায়নি। বরং দ্বিগুন তেজে জ্বলে উঠে।এর মধ্যে জিন্নাহ ইন্তেকাল করেন। লিয়াকত আলী খান ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হন। তিনি ১৯৪৯ সালে জামায়াতের “ইসলামী সংবিধানের রূপরেখা” গ্রহন করেন। সে বছর পাকিস্তানে জেনারেল আকবর খানের নেতৃত্বে ১ম সেনাবাহিনীতে ক্যু হয়। সেনাপ্রধান আইয়ুব খানের কারণে সে ক্যু ব্যার্থ হয়। ১৯৫০ সালে সাইয়্যেদ মওদুদী রঃ মুক্তি পান। ১৯৫১ সালে লিয়াকত সাহেব আততায়ীর গুলিতে ইন্তেকাল করেন। [২]
ভাষা আন্দোলনঃ
ভাষা আন্দোলনকে আমার মনে হয়েছে বাঙ্গালী জাতির সংকীর্ণতা। তাই আদতেই আমি এর বিপক্ষে। কোন ভাষা রাষ্ট্রীয় ভাষা না হলে সেই ভাষা ধ্বংস হয়ে যায় না। এটি তৎকালীন পাকিস্তানের সংহতির বিরোধী। পাকিস্তানী নেতারা (ইনক্লুডেড বাঙ্গালী) এমন একটি ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা করেছে যা মাত্র ৩-৪ শতাংশ জনগোষ্ঠীর মাতৃভাষা ছিল। এটি সহজ এবং বোধগম্য ছিল। কোন নেতারই এটা মাতৃভাষা ছিল না। তাছাড়া উর্দু মুসলিমদের ভাষার প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছিল মুসলিম লীগ গঠনের পর থেকেই।
হিন্দি নামটি ফার্সি থেকে এসেছে। পারস্যের অধিবাসীরা ভারতীয় লোক ও তাদের ভাষাকে হিন্দি নামে ডাকত। ইতিহাসবিদেরা তাই মনে করেন। ৮ম-১০ম শতকের দিকে ভারতে মুসলিম আক্রমণের সময় উত্তর ভারতের খারি বোলি কথ্য ভাষা থেকে হিন্দির উৎপত্তি ঘটে। খাড়ি বোলি ছিল দিল্লি এলাকার ভাষা, এবং বহিরাগত মুসলিম শাসকেরা সাধারণ জনগণের সাথে যোগাযোগের জন্য এই ভাষাই ব্যবহার করতেন। এই খাড়ি বোলি ভাষার একটি রূপ ধীরে ধীরে ফার্সি ও আরবি ভাষা থেকে প্রচুর শব্দ ধার করলে উর্দু নামের এক সাহিত্যিক ভাষার উদ্ভব ঘটে। উর্দু শব্দটি তুর্কি "ওর্দু" শব্দ থেকে এসেছে যার অর্থ "শিবির" বা "ক্যাম্প"। অন্যদিকে সাধারণ জনগণের মুখের ভাষায় আরবি-ফার্সির তেমন প্রভাব পড়েনি, বরং তারা সংস্কৃত ভাষা থেকে শব্দ ও সাহিত্যিক রীতি ধার করতে শুরু করে এবং এভাবে হিন্দি ভাষার জন্ম হয়। সেই হিসেবে ঐতিহাসিকভাবে উপমহাদেশের মুসলিমরা উর্দু আর অন্যরা হিন্দি ভাষায় কথা বলতো। পাকিস্তানের সেসময় সংখ্যাগরিষ্ঠ মাতৃভাষাগুলো ছিল বাংলা, পাঞ্জাবী, বেলুচ, সিন্ধি, পশতু ইত্যাদি। এর মধ্যে উর্দুই ছিল বোধগম্যতার দিক দিয়ে কমন যা হিন্দীর অনুরূপ। তাই এই ভাষাই মুসলিমদের ভাষা হয়ে উঠে।[৩]
হিন্দি ভাষা দেবনাগরী লিপিতে লেখা হয় এবং এর শব্দভাণ্ডারের বেশির ভাগই সংস্কৃত থেকে এসেছে। অন্যদিকে উর্দু ভাষা ফার্সি লিপিতে লেখা এবং এর শব্দভাণ্ডার ফার্সি ও আরবি থেকে বহু ঋণ নিয়েছে। এছাড়া ভাষা দুইটির ধ্বনি ব্যবস্থা ও ব্যাকরণেও সামান্য পার্থক্য আছে। ১২শ শতক থেকে উর্দু ও হিন্দি উভয় ভাষাই সাহিত্যের ভাষা হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। ১৮শ শতকে ইংরেজির প্রভাবে উর্দু ও হিন্দি সাহিত্যের বিকাশ ঘটে। [৩,৪]
মুসলিম লীগের তথা পাকিস্তানের তৎকালীন নেতারা তাদের প্রদেশগুলোর মধ্যে কমন ভাষা চালু করার জন্যই উর্দুকে সিলেক্ট করেছে। আর বিষয়টা এমন ছিল না যে উর্দু অপ্রত্যাশিতভাবেই পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হয়েছে। প্রত্যেক জাতি তাদের মাতৃভাষাকে রাষ্ট্রভাষা থেকে বঞ্চিত করেছে সংহতি রক্ষার জন্য। শুধুমাত্র সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে সভ্যতার সীমা ছাড়িয়েছে আমাদের কিছু বাঙ্গালী। বাংলার সব মানুষ বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার পক্ষে ছিল এটাও সঠিক নয়। ঢাকায় সেসময় প্রচুর ছাত্র উর্দুর পক্ষেও ভূমিকা রেখেছিলো। বাংলার কোন রাজনৈতিক নেতা বায়ান্নোর আগ পর্যন্ত বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার পক্ষে ছিলেন না। ঢাকা ভার্সিটি ও জগন্নাথ কলেজের (তখন কলেজ ছিল) কিছু ছাত্র ছাড়া এই আন্দোলন কেউ করেনি।
আর সবচেয়ে মজার বিষয় হলো ২১ ফেব্রুয়ারীর ঘটনায় আমরা অবাঙ্গালী পাকিস্তানীদের দোষারোপ করি। অথচ আমাদের মনে থাকে না আমরাই পাকিস্তানের শাসক ছিলাম। তৎকালীন পাকিস্তানে আমরা ৫৬ শতাংশ ছিলাম। ২১ ফেব্রুয়ারির ঘটনা আলোচনায় আসলেই আমরা ঐ সময়ের পশ্চিম পাকিস্তানীদের দিকে তর্জনী উঁচিয়ে বিষোধগার করি এবং বলে থাকি ৫৬ শতাংশ মানুষের উপর উর্দু চাপিয়ে দিচ্ছে তারা। অথচ সেই তারা হলেন বাঙ্গালীরাই। ১৯৫২ তে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন বাঙ্গালী খাজা নাজিমুদ্দিন। তিনি ঢাকার নবাব ছিলেন। ভাষা আন্দোলনের যারা আন্দোলনকারী, যারা আন্দোলন দমনকারী, যারা জেলে গিয়েছে, যারা জেলে নিয়েছে, যারা গুলি করেছে, যারা গুলির নির্দেশ দিয়েছে, যারা গুলিতে মৃত্যুবরণ করেছে সবাই বাঙ্গালী। বামপন্থি কিছু নেতা ছাড়া এদেশের কোন বাঙ্গালী রাজনৈতিক নেতা এবং তাদের অনুসারীরা বাষ্ট্রভাষা বাংলার পক্ষে ছিলেন না। বামদের গ্রহনযোগ্যতা তৎকালীন ৫২’র পাকিস্তানে ছিল না।
সেসময়ের বাঙ্গালী শীর্ষ নেতা ছিলেন
১- হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী
২- নবাব খাজা নাজিমুদ্দিন
৩- এ কে ফজলুল হক
৪- মোহাম্মদ আলী বগুড়া
৫- নুরুল আমীন
৬- মাওলানা আতাহার আলী
৭- হাজী মুহাম্মদ দানেশ
ওনারা কেউই রাষ্ট্রভাষা বাংলার পক্ষে ছিলেন না পাকিস্তানের সংহতি রক্ষা করার নিমিত্তে। ভাষা আন্দোলন প্রথমে কিছু সাধারণ ছাত্র এবং খেলাফতে রব্বানীর সাংস্কৃতিক উইং তমুদ্দিন মজলিশের মাধ্যমে শুরু হলেও পরে এটির লক্ষ্য অন্যদিকে পরিবর্তিত হয়। ১৯৪৮ সালে রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের নেতাদের সাথে জিন্নাহর বৈঠকে জিন্নাহ তাদের বুঝাতে সক্ষম হন কেন উর্দু জরুরী। আন্দোলন থামিয়ে দিতে চায় তমুদ্দুন মজলিশ। কিন্তু কমরেড তোয়াহা তমুদ্দুন নেতা শামসুল হক থেকে বাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের দায়িত্ব ছিনিয়ে নিয়ে বামদের আন্দোলনে পরিণত করে।
এখন স্বাভাবতই প্রশ্ন উঠতে পারে জনবিচ্ছিন্ন এই আন্দোলন কেন সফল হলো?
১- পাকিস্তান রাষ্ট্রে সেসময়ে তখনো কোন স্বৈরশাসক আসেনি। সাধারণ কোন বিষয়ে গুলি চালানোর মানুষের কল্পনার বাইরে ছিল। সাধারণ মানুষ গুলি চালানো মেনে নিতে পারেনি। আন্দোলন কারীদের প্রতি সবাই সিম্পেথাইজড হয়। দাবিটাও জোরালো হয়। আর এতেই পরিস্থিতি অন্যদিকে ঘুরে যায়। যদিও রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের বৈঠকে সেদিন সিদ্ধান্ত হয় ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করা হবে না। কিছু সিদ্ধান্ত অমান্যকারী মিছিল শুরু করলেই পুলিশ গুলি করে।
২- ১৯৫৬ সালে যুক্তফ্রন্ট সরকার ঐ ঘটনার দায় মুসলিম লীগের উপর চাপিয়ে রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের উদ্দেশ্যে এবং ভাষা আন্দোলন তাদের অর্জন এটা প্রতিষ্ঠিত করতে গিয়ে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করেন।
আমি শুরুতে বলেছিলাম ভারত চেয়েছিল পূর্ব-পাকিস্তান কে পশ্চিম-পাকিস্তান থেকে আলাদা করার জন্য। এই ভাষা আন্দোলনের পেছনে ভারতের যথেষ্ট অবদান আছে। ভাষা আন্দোলনের এই বিষয়টি সর্বপ্রথম জনসম্মুখে আনেন তৎকালে ভারতীয় চর হিসেবে পরিচিত ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত। তিনি গণপরিষদে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার প্রস্তাব করেন। কিন্তু গণপরিষদের অন্য কোন সদস্য তার এই প্রস্তাবকে সমর্থন করেননি। বহুজাতি নিয়ে গঠিত পাকিস্তানে এই বক্তব্য সাম্প্রদায়িক বক্তব্য হিসেবে বিবেচিত হয় এবং তার প্রস্তাব নাকচ হয়।
বিষয়টাকে গুরুত্ব দিয়ে আলোচনায় নিয়ে আসে তথাকথিত প্রগতিবাদী ইসলামী সংগঠন, সমাজতান্ত্রিক ইসলাম ও ধর্মনিরপেক্ষ ইসলামের প্রবক্তা খেলাফতে রব্বানী। তাদেরই কালচারাল উইং তমুদ্দুনে মজলিশ।
কাদিয়ানী সমস্যাঃ
পাঞ্জাবী লিয়াকত আলী খানের মৃত্যুর পর ১৯৫১ সালে প্রধানমন্ত্রী হন বাঙ্গালী খাজা নাজিম উদ্দিন। তিনি ১৯৫৩ সালের এপ্রিল পর্যন্ত ক্ষমতায় ছিলেন। সে সময় পাকিস্তানে আহমদিয়া বা কাদিয়ানী সম্প্রদায়ের ব্যপক বিস্তার হয়, পাকিস্তানের কয়েকজন উর্ধতন কর্মকর্তা এই মতবাদের অনুসারী ছিলেন। সাইয়্যেদ মওদুদী রঃ তখন 'কাদিয়ানী সমস্যা' নামে একটি বই লিখে কাদিয়ানী বা আহমদিয়া সম্প্রদায়কে অমুসলিম প্রমাণ করেন এবং এদের রাষ্ট্রীয়ভাবে অমুসলিম ঘোষনার জন্য আন্দোলন শুরু করেন। এই আন্দোলন বড় ধরণের নাড়া দেয় পাকিস্তানকে। অধিকাংশ মুসলিম এই আন্দোলনে অংশগ্রহন করেন। এ সময় অনেকগুলো সংগঠন একযোগে কাদিয়ানীদেরকে সরকারিভাবে অমুসলিম ঘোষনার দাবিতে আন্দোলন শুরু করে। তারা সর্বদলীয় কনভেনশনে ২৭ ফেব্রুয়ারি তারিখে 'ডাইরেক্ট একশন কমিটি' গঠন করে। জামায়াত এই কমিটির বিরোধিতা করে অহিংস আন্দোলনের পক্ষে অবস্থান নেয়। কিন্তু তথাপি মার্চ মাসের শুরুতে আন্দোলন চরম আকার ধারণ করে এবং পুলিশের গুলিতে কিছু লোক নিহত হয়।
ডাইরেক্ট একশন কমিটি কাদিয়ানীদের কিছু মানুষকে হত্যা করে, এর ফলশ্রুতিতে দাঙ্গা দেখা দেয়। পরিস্থিতি সামাল দিতে না পেরে খাজা নাজিমুদ্দিন পদত্যাগ করেন। প্রধানমন্ত্রী হন আরেক বাঙ্গালী মোহাম্মদ আলী বগুড়া। তারা সবাই মুসলিম লীগের নেতা। পরিস্থিতি সামাল দিতে মাঠে নামে সেনাবাহিনী। গ্রেপ্তার হন সাইয়্যেদ মওদুদী রঃ। তার গ্রেপ্তারে আন্দোলন আরো ভয়ংকর হয়। সরকার কাদিয়ানীদের মৌখিকভাবে কাদিয়ানীদের নিষিদ্ধ ঘোষনা করে। পরে একটি সামরিক আদালত সাইয়্যেদ মওদুদী রঃ কে এই গোলযোগের জন্য দোষী সাব্যস্ত করে মৃত্যুদন্ডের আদেশ দেয়। তবে বহিঃবিশ্বের চাপে সেই দন্ড কার্যকর করতে পারেনি মোহাম্মদ আলী বগুড়ার সরকার। মুক্তি পান সাইয়্যেদ মওদুদী রঃ। [৪,৫]
যুক্তফ্রন্ট সরকারঃ
পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় পরিষদের ১৯৫৪ খ্রীস্টাব্দের নির্বাচনে মুসলিম লীগকে ক্ষমতাচ্যুত করার লক্ষ্যে অন্যান্য দল মিলে যুক্তফ্রন্ট নামীয় একটি সমন্বিত বিরোধী রাজনৈতিক মঞ্চ গঠন করার উদ্যোগ নেয়া হয় এবং আওয়ামী মুসলিম লীগ ১৯৫৩ সালের ৪ ডিসেম্বর তারিখে কৃষক শ্রমিক পার্টি, পাকিস্তান গণতন্ত্রী দল ও পাকিস্তান খেলাফত পার্টির সঙ্গে মিলে যুক্তফ্রন্ট গঠন করে। সাথে আরো ছিল মৌলানা আতাহার আলীর নেজামে ইসলাম পার্টি। বামপন্থী গনতন্ত্রী দলের নেতা ছিলেন হাজী মোহাম্মদ দানেশ এবং মাহমুদ আলি সিলেটি।
১৯৫৪ সালের মার্চের ৮ থেকে ১২ তারিখ পর্যন্ত অনুষ্ঠিত পূর্ব পাকিস্তান পরিষদের নির্বাচনে ২৩৭টি মুসলিম আসনের মধ্যে যুক্তফ্রন্ট ২২৩টি আসন অর্জ্জন করে। তন্মধ্যে ১৪৩টি পেয়েছিল মওলানা ভাসানীর নেতৃত্বাধীন আওয়ামী মুসলিম লীগ, ৪৮টি পেয়েছিল শেরে বাংলা এ. কে. ফজলুল হকের কৃষক শ্রমিক পার্টি, নেজামী ইসলাম পার্টি লাভ করেছিল ২২, গণতন্ত্রী দল লাভ করেছির ১৩টি এবং খেলাফত-ই-রাব্বানী নামক দলটি ১টি আসন। ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল মুসলিম লীগ সম্পূর্ণরূপে এ নির্বাচনে পরাভূত হয় ; তারা কেবল ৯টি আসন লাভ করতে সমর্থ হয়।
এ নির্বাচনে সংখ্যালঘু ধর্মীয় সম্প্রদায়ের জন্য ৭২টি আসন সংরক্ষিত ছিল। এগুলোর মধ্যে কংগ্রেস লাভ করেছিল ২৪টি আসন, কমিউনিস্ট পার্টি ৪টি, শিডিউল্ড কাস্ট ফাউন্ডেশন ২৭টি, গণতন্ত্রী দল ৩টি এবং ইউনাইটেড পগ্রেসিভ পার্টি ১৩টি আসন লাভ করেছিল। একজন স্বতন্ত্র প্রার্থী একটি আসনে জয়ী হয়েছিলেন।
এখানে একটা বিষয় গোলমাল লেগে যায়। সোহরাওয়ার্দী ছিলেন আওয়ামী মুসলিম লীগের পাকিস্তান সভাপতি। আর ভাসানী ছিলে পূর্ব পাকিস্তান সভাপতি। সোহরাওয়ার্দী পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হন ১৯৫৬ সালে। প্রায় বছরখানেক তিনি প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। ১৯৫৬ সালের ২৩ মার্চ পাকিস্তানের সংবিধানের খসড়া পাস হয়। এবং এর মাধ্যমে গণপ্রজাতন্ত্রী পাকিস্তান ইসলামিক রিপাবলিকে পরিণত হয়। এতটুকুই ছিল মূলত জামায়াতে ইসলামীর সফলতা। এছাড়া জামায়াতের ইসলামী সংবিধানের রূপরেখার কিছুই গ্রহন করা হয়নি।
নতুন সংবিধানে গভর্ণর জেনারেল সিস্টেম বাদ পড়ে ইস্কান্দর মির্যা হন পাকিস্তানের প্রথম প্রেসিডেন্ট। আগে মূলত রাষ্ট্র প্রধানমন্ত্রী দ্বারা পরিচালিত হতো। নতুন সংবিধান অনুযায়ী প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা বেড়ে যায়। ইস্কান্দর মির্যার সাথে সোহরাওয়ার্দীর বিরোধ বাড়তে থাকে। ১৯৫৭ সালের অক্টোবরে সোহরাওয়ার্দী পদত্যাগ করেন। এর প্রায় একবছর পর ১৯৫৮ সালে ক্যু করেন আইয়ুব খান। পাকিস্তানের ক্ষমতা দখল করেন এবং প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। তিনি ১৯৬৯ সালের ২৫ মার্চ পর্যন্ত ক্ষমতায় ছিলেন। [বাংলাপিডিয়া]
৬৫ সালের পাক-ভারত যুদ্ধ এবং ছয় দফার সৃষ্টিঃ
১৯৬৫ সালের সেপ্টেম্বরে পাক ভারত যুদ্ধ হয়। যুদ্ধটি স্থায়ী ছিল ১৭ দিন। কাশ্মীর সহ নানা ইস্যুতে পাকিস্তানে অতর্কিত আক্রমন করে ভারত। পাকিস্তান যুদ্ধের জন্য অপ্রস্তুত থাকার থাকার কারণে প্রাথমিক ভাবে ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখিন হয়। তবে ৫-৬ দিনের মধ্যেই আইয়ুব খানের রণনৈপুণ্যে ও বাঙ্গালী সৈনিকদের নজিরবিহীন আত্মত্যাগে যুদ্ধের মোড় ঘুরে যায়। ভারতের প্রায় ৬০ টি বিমান ৪৫০ ট্যাংক ধ্বংস হয়। এমতাবস্থায় ভারত যুদ্ধ বন্ধের উদ্যোগী হয়ে পড়ে। অপরদিকে পাকিস্তানের গোলাবারুদ সংকট ও যুদ্ধক্ষেত্র পাকিস্তান হওয়ায় পাকিস্তানের জনজীবন হুমকির সম্মুখিন। সব মিলিয়ে পাকিস্তানও যুদ্ধ বন্ধের পক্ষে। [উইকিপিডিয়া, বাংলাপিডিয়া]
ভারতের বন্ধু রাশিয়ার মধ্যস্থতায় যুদ্ধ বন্ধ হয় এবং একটা চুক্তি হয়, যা তাসখন্দের চুক্তি বলে অভিহিত। পাকিস্তানের রাজনৈতিক দলগুলো ও সাধারণ জনগণ এই চুক্তি মানে নি। এটা ছিল সূবর্ণ সুযোগ কাশ্মীর সমস্যা সমাধানের। কিন্তু আইয়ুবের কূটনৈতিক ব্যর্থতায় তা হলো না। ক্ষেপে উঠে রাজনীতিবিদেরা ও পাকিস্তানী জেনারেলরা। আইয়ুবের বিরুদ্ধে বিরোধী দলগুলো জোট গঠনের চেষ্টা করে। এতে নেতৃত্ব দেয় মুসলিম লীগ। ১৯৬৬ সালের ৫ ফেব্রুয়ারী লাহোরে সেই মিটিঙে আরো অংশগ্রহন করে আওয়ামীলীগ, জামায়াত, নেজামে ইসলাম। আওয়ামীলীগের পূর্বপাকিস্তানের সেক্রেটারী মুজিব সেই প্রোগ্রামে আ. লীগের হয়ে অংশগ্রহন করেন। [৭]
সেই মিটিঙে মুজিব হঠাৎ করে ৬ দফা ঘোষনা করে বসেন। কিন্তু অন্যান্য বিরোধী দল তা মেনে নেন নি। তারা বলেন, আমরা আজ একত্রিত হয়েছি কাশ্মীর, তাসখন্দ ও আইয়ুব খান কে নিয়ে। ফলে মিটিঙের কার্যসূচী থেকে ছয় দফা বাদ পড়ে। মুজিব সভাস্থল ত্যাগ করে। মজার বিষয় হল নিখিল পাকিস্তানের আ. লীগ প্রেসিডেন্ট নওয়াবজাদা নসরুল্লাহ খান এতে বিস্মিত হয়ে পড়েন। কারণ তিনি এই বিষয়ে কিছুই জানতেন না। এই ছয় দফা নিয়ে আ. লীগে ভাঙ্গন দেখা দেয়। শুধু তাই নয় যারা সেই মিটিঙে আ. লীগের অন্যান্য নেতা যারা মুজিবের সফরসঙ্গী হয়েছিলেন তারাও আগে থেকে কিছুই জানতেন না ৬ দফার ব্যাপারে।
দুঃখজনক ও বিস্ময়কর হলেও সত্য মূলত এই ছয় দফার কারিগর ছিলেন আইয়ুব খান। কারণ তিনি চেয়েছিলেন সেনা অফিসার ও রাজনীতিবিদদের দৃষ্টি তাসখন্দ থেকে অন্যদিকে সরিয়ে দিতে। এবং ৬ দফার বিরোধী হয়ে পাকিস্তানের প্রত্যক্ষ প্রভাব বজায় রাখতে সবাই যেন তার হাতকেই শক্তিশালী করে। পরিশেষে কিন্তু তাই হয়েছিলো। আইয়ুব ৬ দফাকে হাতিয়ার করে বাঁচতে চেয়েছিলেন। আইয়ুব তথ্য সচিব আলতাফ গওহরকে দিয়ে ৬ দফা প্রনয়ন করেন। আলতাফ সাহেব কর্মসূচীটি রুহুল কুদ্দুসকে দেন। রুহুল কুদ্দুস ছিলেন মুজিবের ইনার সার্কেল। তিনি সেটা কৃষি ব্যংকের এম ডি খায়রুল বাশারকে দিয়ে টাইপ করিয়ে বিমানে উঠার আগ মুহুর্তে মুজিবের হাতে গুঁজে দেন। [৮, ১০]
বিষয়টি আরো স্পষ্ট হয়ে উঠে এই কারণে যে, আলতাফ গওহর পাকিস্তানের সমস্ত পত্র-পত্রিকাকে নির্দেশ দেন এই মর্মে যেন তারা ৬ দফার বহুল প্রচার করে। এভাবেই ছয় দফা আলোচিত হয়। নতুবা বিরোধীদের মিটিঙে যেই ছয় দফা নিয়ে কোন আলোচনাই হয় নি সেই ছয় দফা নিয়ে মাতামাতি করার কোন কারণ নেই। লাহোরে ৫ তারিখ ৬ দফা উত্থাপন না করতে পেরে মুজিব ১০ ফেব্রুয়ারী সংবাদ সম্মেলন করেন। এতে পত্রিকাগুলো আরো রসদ পায়। মানুষ ভুলে যায় তাসখন্দ কিংবা কাশ্মীর সমস্যা। রাজনীতিবিদ ও সামরিক অফিসারদের মাথা ব্যাথার কারণ হয় ৬ দফা। [৮,৯]
এদিকে মুজিবের অবস্থাও ভালো নয়। আওয়ামী লীগের অধিকাংশই ৬ দফা মানে নি। দফা গুলোর সাথে তাদের বিরোধ না হলেও তাদের মূল বিরোধ মুজিবকে নিয়ে। মুজিবের কারো সাথে পরামর্শ না করে এহেন ঘোষনা কেউ মেনে নিতে পারে নি। ১৯৬৬ সালের ১৮-১৯ মার্চ ঢাকায় পূর্ব-পাকিস্তানের ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠক শুরু হয়। এতে অন্যান্য মেম্বার সহ লীগ সভাপতি আব্দুর রশীদ তর্কবাগীশের প্রবল আপত্তির মুখে মুজিব ছয় দফা পাশ করাতে ব্যর্থ হয়। এর মাধ্যমে ছয় দফার সাথে আ. লীগের আর কোন সম্পর্ক থাকে না। হতাশ মুজিব তার শেষ অস্ত্র ছাত্রলীগকে ব্যবহার করেন। [৭,৮,৯]
এই প্রসঙ্গে সাবেক মন্ত্রী ও তৎকালীন ছাত্রলীগ নেতা আব্দুর রাজ্জাক বলেন। দুঃখভরা মন নিয়ে শেখ মুজিব আমাদের(ছাত্রলীগ) ডাকলেন। বললেন, আমি তো বিপদে পড়ে গেছি। আমারে তোরা কি সাহায্য করবি না? ছয় দফা বলার পর থেকেই বিভিন্ন দিক থেকে আমার অপর এটাক আসছে। আমার তো এখন ঘরে বাইরে শত্রু। আমরা তখন বললাম নিশ্চয়ই আপনার পাশে থাকবো। যাই হোক ফ্যসিবাদী মুজিব ছাত্রলীগের গুন্ডাদের সহযোগিতায় সভাপতিকে পদত্যাগে বাধ্য করেন। এবং নিজে পূর্ব পাকিস্তান আ. লীগের সভাপতি হন। ছয় দফার আন্দোলন এগিয়ে নিয়ে যান। [৮]
এভাবেই আইয়ুব-মুজিব ষড়যন্ত্রে নষ্ট হয়ে যায় কাশ্মীরের মুসলমানদের ভাগ্য। হয়তো তখন পাকিস্তানী জেনারেলরা তাসখন্দ চুক্তিকে বাতিল করে ভারতকে চাপ দিয়ে কাশ্মীর অধিকার করে নিতে পারতো।
ড: আনিসুজ্জামান এই প্রসঙ্গে বলেন,
"ছয় দফার প্রণেতা কে, এই নিয়ে অনেক জল্পনা হয়েছিল। কেউ কেউ বলেছিলেন সিভিল সার্ভিসের কয়েকজন সদস্য এটা তৈরি করে শেখ মুজিবকে দিয়েছিলেন, কেউ কেউ সে কৃতিত্ব কিংবা দোষ দিয়েছিলেন কয়েকজন সাংবাদিককে। তাদের পেছনে কোন শক্তি কাজ করছিল, সে বিচারও হয়েছিল। প্রথমে উঠেছিল ভারতের নাম। কিন্তু পাকিস্তান হওয়া অবধি তো দেশের বহু গণতান্ত্রিক আন্দোলনকে আখ্যা দেওয়া হয়েছিল ভারতের প্ররোচনা বলে। পরে বড়ো করে যে নাম উঠলো, তা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের। চীনের সঙ্গে পাকিস্তানের বন্ধুত্ব এবং ভারতের সঙ্গে যুক্তরাষ্টের বন্ধুত্বের কারণে পাকিস্তান ভাঙার উদযোগ নিচ্ছে মার্কিনরা, এমন একটা ধারণা খুব প্রচলিত হয়েছিল। আমরা যারা একটু বামঘেঁষা ছিলাম, তারা এই ব্যাখ্যা মেনে নিয়েছিলাম। ফলে, ফেডারেল পদ্ধতি ও স্বায়ত্ত্বশাসনের পক্ষপাতী হলেও ছয় দফাকে আমরা তখন গ্রহণ করিনি। আমরা আরো শুনেছিলাম যে, পাকিস্তান ভাঙতে পারলে পূর্ব পাকিস্তানে মার্কিন সামরিক ঘাঁটি করতে দেওয়া হবে; সুতরাং এ কাজে মার্কিনদের উৎসাহ তো থাকবেই। যদি প্রশ্ন উঠতো যে, পাকিস্তান তো সেনটো-সিয়াটোর সদস্য, তাহলে জবাব পাওয়া যেতো যে, পাক-ভারত যুদ্ধের পরপ্রেক্ষিতে ওসব জোটের অসারতা প্রমাণ হয়ে গেছে এবং পাকিস্তান যে কোন সময় তার থেকে বেরিয়ে আসতে পারে। পাকিস্তান কখনোই এসব সামরিক জোট ছাড়েনি, তবে আইয়ুব খানের ‘ফ্রেন্ডস নট মাস্টার্সে’র প্রচারিত নীতি কিছুটা এ ধারণাকে পুষ্ট করেছিল।” [১১]
আতাউর রহমান খান (প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী) বলেন,
"(তাসখন্দে) কয়দিন আলোচনার পর প্রেসিডেন্ট আইয়ুব ও লালবাহাদুর শাস্ত্রী একটি যুক্ত ঘোষণাপত্রে স্বাক্ষর করলেন। সিদ্বান্ত হল, শান্তিপূর্ণভাবে উভয় পক্ষ নিজেদের ছোট বড় সমস্যার সমাধান করবে। আশ্চর্যের কথা, যা নিয়ে যুদ্ধ, অর্থাৎ কাশ্মীর, তার নামগন্ধও এই ঘোষণাপত্রে উল্লেখ রইল না। এত কান্ড করে, এত ক্ষয়ক্ষতি স্বীকার করে, সারা পাকিস্তানকে প্রায় ধ্বংসের মুখোমুখি ঠেলে দেওয়ার পর সিদ্ধান্ত হল, ওম্ শান্তি।
পশ্চিম পাকিস্তানে বিপুল ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। অসংখ্য শহর বাজার গ্রাম ধ্বংস হয়ে গেছে। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সেরা সৈনিক নিহত হয়েছেন। পৃথিবীর কোন যুদ্ধে নাকি এত অল্প সময়ে এত অফিসার নিহত হয় নাই। তাদের স্থান পূরণ সম্ভব হবে না। তাই, পশ্চিম পাকিস্তানে প্রতিক্রিয়া অত্যন্ত বিরুপ ছিল। এত ক্ষয়ক্ষতির পর আয়ুব খাঁ সম্পূর্ণভাবে আত্মসমর্পণ করে অপমান-জনক একটি ঘোষণায় স্বাক্ষর করলেন। দেশবাসীর আশা-আকাঙ্খার প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা করলেন। এই চুক্তি অপরাধ স্বীকৃতির শামিল বলে তারা মনে করে।
যে সব সৈনিক কর্মচারী শহীদ হয়েছেন তাদের বিধবা স্ত্রী ও পরিবারবর্গ এক মিছিল বার করল লাহোর শহরে। ধ্বনি তুলল, আমাদের স্বামী পুত্র ফেরত দাও। তারা শাহাদাত বরণ করার সৌভাগ্য অর্জন করতে পারেন নাই। অনর্থক আপনি তাদের মৃত্যুর পথে ঠেলে দিয়েছেন। অকারণে তাদের অমূল্য জীবন নষ্ট হয়ে গেছে। যদি দেশের স্বার্থরক্ষার জন্য হতো, তা হলে আপনি এমন চুক্তি কেন স্বাক্ষর করলেন? ইত্যাদি –
পশ্চিম পাকিস্তানের বিরোধীদলীয় নেতৃবৃন্দ পরিস্থিতি আলোচনা করার জন্য ফেব্রুয়ারী মাসের পাঁচ-ছয় তারিখে নিখিল পাকিস্তান জাতীয় কনফারেন্স আহ্বান করলেন। এই উপলক্ষে চৌধুরী মহম্মদ আলি ও নবাবজাদা নসরুল্লাহ খাঁ ঢাকা এসে সব দলের সাথে আলাপ আলোচনা করে কনফারেন্সে যোগদানের জন্য আমন্ত্রণ করলেন। বললেন, পরিস্থিতি অত্যন্ত সঙ্কটজনক এই মূহুর্তে আমাদের কর্তব্য নির্ধারণ করা উচিত।
জামাত, নিজামে ইসলামীও কাউন্সিল লীগ যোগদানে সম্মতি দিল। আওয়ামী লীগেরও দোমনাভাব। শেখ মুজিবের মতামতই দলের মত। প্রতিষ্ঠানের ভিন্ন অভিমত নাই। শেখ মুজিব কনফারেন্সে যোগদানে অসম্মতি জ্ঞাপন করলেন। এন-ডি-এফ সভা করে মত প্রকাশ করল যে, কনফারেন্সের পক্ষে আমাদের নৈতিক সমর্থন রয়েছে, তবে বর্তমান অবস্থায় কোন সদস্য এতে যোগদান করতে পারছেনা। শেখ মুজিব আমাকে টেলিফোনে বললেন, আপনারা ঠিকই করেছেন। আমরাও যাবনা।
পরদিন সংবাদপত্রে দেখি, শেখ মুজিব সদলবলে লাহোর যাচ্ছেন। প্রায় চৌদ্দ পনেরো জন এক দলে। ব্যাপার কি? হঠাৎ মত পরিবর্তন। মতলবটা কি?
লাহোর কনফারেন্স শুরু হল গভীর উত্তেজনাপূর্ণ পরিবেশে।
অধিবেশন চলাকালে হঠাৎ একটি বোমা নিক্ষেপ করলেন – ‘ছয় দফা’। প্রস্তাব বা দাবীর আকারে একটা রচনা নকল করে সদস্যদের মধ্যে বিলি করা হল। কোন বক্তৃতা বা প্রস্তাব নাই, কোন উপলক্ষ নাই, শুধু কাগজ বিতরণ। পড়ে সকলেই স্তম্ভিত হয়ে গেল। জাতীয় কনফারেন্সে এই দাবী নিক্ষেপ করার কি অর্থ হতে পারে? কনফারেন্স ভিন্ন উদ্দেশ্য নিয়ে সম্মিলিত হয়েছে। এই দাবী যত গুরুত্বপূর্ণই হোক না কেন, এই সম্মেলন ও এই সময় তার উপযোগী নয় – সম্পূর্ণ অবান্তর। [১২]
তারপর দলবলসহ শেখ মুজিব ঢাকা ফিরে এসে মহাসমারোহে ‘ছয় দফা’ প্রচার করলেন সংবাদপত্রে। শেখ মুজিবের দাবী ও নিজস্ব প্রণীত বলে ছয়-দফার অভিযান শুরু হয়ে গেল।
ছয় দফার জন্মবৃত্তান্ত নিম্নরুপ :
কিছুসংখ্যক চিন্তাশীল লোক দেশের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক দূরাবস্থার কথা আলাপ আলোচনা করেন। আমাদের ইঙ্গিত ও ইশারা পেয়ে তারা একটা খসড়া দাবী প্রস্তুত করলেন। তারা রাজনীতিক নয় এবং কোন রাজনৈতিক দলের সাথে সংশ্লিষ্টও নয়। তারা ‘সাত দফার’ একটা খসড়া আমাদের দিলেন। উদ্দেশ্য, এটা স্মারকলিপি হিসাবে আয়ুব খাঁর হাতে দেওয়া, কিংবা জাতীয় পরিষদে প্রস্তাবাকারে পেশ করার ব্যবস্থা করা।
কিছুসংখ্যক চিন্তাশীল লোক দেশের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক দূরাবস্থার কথা আলাপ আলোচনা করেন। আমাদের ইঙ্গিত ও ইশারা পেয়ে তারা একটা খসড়া দাবী প্রস্তুত করলেন। তারা রাজনীতিক নয় এবং কোন রাজনৈতিক দলের সাথে সংশ্লিষ্টও নয়। তারা ‘সাত দফার’ একটা খসড়া আমাদের দিলেন। উদ্দেশ্য, এটা স্মারকলিপি হিসাবে আয়ুব খাঁর হাতে দেওয়া, কিংবা জাতীয় পরিষদে প্রস্তাবাকারে পেশ করার ব্যবস্থা করা।
এই খসড়ার নকল বিরোধীদলীয় প্রত্যেক নেতাকেই দেওয়া হয়। শেখ মুজিবকেও দেয়া হয়। খসড়া রচনার শেষ বা সপ্তম দফা আমরাও সমর্থন করি নাই। শেখ মুজিব সেই দফা কেটে দিয়ে ছয়দফা তারই প্রণীত বলে চালায়ে দিল। তারপর বিভিন্ন বিশেষজ্ঞ ব্যক্তির দ্বারা ছয় দফার দার্শনিক, বৈজ্ঞানিক ও অর্থনৈতিক মর্ম ও তাৎপর্য লেখায়ে প্রকাশ করা হয়। ইংরেজী ও বাংলায় মুদ্রিত হয়ে পুস্ত্কাকারে প্রচারিত হয় সারা দেশব্যাপী।
লাহোর কনফারেন্স বানচাল হয়ে গেল। নেতৃবৃন্দ শেখ মুজিবকেই এর জন্য বিশেষভাবে দায়ী করেন। তারা অভিযোগ করেন, শেখ মুজিব সরকার পক্ষ থেকে প্ররোচিত হয়ে এই কর্ম করেছেন। লাহোরে পৌঁছার সাথে সাথে আয়ুব খাঁর একান্ত বশংবদ এক কর্মচারী শেখ মুজিবের সাথে সাক্ষাৎ করে কি মন্ত্র তার কানে ঢেলে দেয় যার ফলেই শেখ মুজিব সব উলটপালট করে দেয়। তারা এও বলে যে আওয়ামী লীগের বিরাট বাহিনীর লাহোর যাতায়াতের ব্যয় সরকারের নির্দেশে কোন একটি সংশ্লিষ্ট সংস্থা বহন করে। আল্লাহ আলীমূল গায়েব।” [১২]
বিঃ দ্রঃ অনেকে মনে করেন ছয় দফা বাংলাদেশ সৃষ্টিতে ভূমিকা রেখেছিলো। তা মোটেই নয়। কারণ আইয়ুবের পতনের সাথে সাথেই মুজিব ভুলে যায় ছয় দফার কথা। তিনি পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার জন্য নির্বাচনের প্রস্তুতি নেন। ইশতেহারে উল্লেখ করেন পাকিস্তানের সর্বোচ্চ অখন্ডতা রাখবেন, কুরআন-সুন্নাহ বিরোধী আইন করবেন না। ছয় দফা তার ৭০ এর নির্বাচনী মেনিফেস্টোতো ছিল না।
দু’দফা জামায়াত নিষিদ্ধঃ
আইয়ুব খান ১৯৫৮ সালে এবং ১৯৬৪ সালে জামায়াত নিষিদ্ধ করে। ১৯৬৪ সালে গ্রেপ্তার হন এবং সে বছরই মুক্তি পান। সরকারের স্বৈরচারী আচরণের প্রতিবাদ এবং ইসলামী সংবিধানের জন্য চলমান আন্দোলনের জন্য জামায়াতের উপর এই নির্যাতন নেমে আসে। [৬]
আগরতলা ষড়যন্ত্রঃ
আইয়ুব সরকারকে উৎখাত করার জন্য শেখ মুজিব ভারতের গোয়েন্দা বাহিনীর সাথে গোপন বৈঠক করে। এটা সরকারি গোয়েন্দারা আবিষ্কার করে এবং মুজিব সহ ৩৫ জনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা করে। মুজিবের বিরুদ্ধে জনগণ ক্ষেপে উঠে। মুজিবসহ আওয়ামীলীগ এই বৈঠকের কথা অস্বীকার করে। জনগণ গোড়া থেকেই ভারতবিরোধী। মুজিব এই ধরণের কাজ করতে পারে তা তাদের ধারণার অতীত। বাঙ্গালীরা স্বৈরাচারী আইয়ুবের কথা বিশ্বাস করেনা বিশ্বাস করে আওয়ামী লীগের কথা। আওয়ামীলীগ এই মামলার নাম দেয় আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার বিরুদ্ধে এবং শেখ মুজিবের মুক্তির দাবীতে পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ আন্দোলন শুরু করে। [১৩, ১৪]
অপরদিকে পশ্চিম পাকিস্তানেও স্বৈরাচারী আইয়ুব বিরোধী আন্দোলন শুরু হয়। সৃষ্টি হয় গণঅভ্যুত্থানের। আইয়ুব খান পরিস্থিতি সামাল দিতে না পেরে ক্ষমতা থেকে সরে দাঁড়ায় সেনাপ্রধান ইয়াহিয়া খানের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করে। ইয়াহিয়া খান এসেই প্রথমে সাধারণ নির্বাচনের ঘোষনা দেয়। মামলা নিষ্পত্তির চার যুগ পর মামলার আসামী ক্যাপ্টেন এ. শওকত আলী ২০১১ সালে প্রকাশিত একটি স্বরচিত গ্রন্থে এ মামলাকে সত্য মামলা' বলে দাবী করেন। মজার বিষয় হলো এই দাবীটা তিনি যদি ১৯৬৯ এ করতেন তাহলে আর আওয়ামীলীগের এতদিন পর্যন্ত রাজনীতি করার সৌভাগ্য হতো না। ভারত সংশ্লিষ্টতা কিংবা পাকিস্তান বিরোধী কোন কর্মকান্ড সে সময় জনগণ সহ্য করতো না। এই সমস্যাটা হয়েছে ভাসানীর ক্ষেত্রে। ভাসানী ১৯৭০ এ বাঙ্গালীদের মধ্যে সবচাইতে প্রভাবশালী নেতা ছিলেন। তিনি নির্বাচন না করে ঘোষনা দিলেন “ভোটের বাক্সে লাথি মার বাংলাদেশ স্বাধীন কর”। বাঙ্গালী জনগণ লাথি ঠিকই মেরেছে তবে ভোটের বাক্সে নয়, ভাসানী এবং তার দল ন্যশনাল আওয়ামী পার্টিকে। ভাসানী হিরো থেকে জিরোতে পরিণত হন। অপরদিকে পাকিস্তানের সংহতির প্রতি আনুগত্য পোষন করে ইশতেহারে কুরআন সুন্নাহ পরিপন্থী কোন সিদ্ধান্ত নেবেন না এমন প্রতিশ্রুতি দিয়ে নির্বাচন করেন মুজিব। মুজিবের এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে মুজিবকে বিপুল ভোট দেয় বাঙ্গালী জনগণ।
সত্তরের নির্বাচন ও ফলাফলঃ
ইয়াহিয়া খানের সামরিক শাসনামলে ১৯৭০ সনে পাকিস্তানে প্রথম সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। পূর্ব পাকিস্তানে ১৯৭০ সনের অক্টোবরে নির্বাচন হওয়ার কথা থাকলেও বন্যার কারণে ডিসেম্বর পর্যন্ত পিছিয়ে যায়। কিছু কিছু ক্ষেত্রে ১৯৭১ এর জানুয়ারি পর্যন্ত পিছিয়ে যায়। নির্বাচনে মোট ২৪ টি দল অংশ নেয়। ৩০০ টি আসনে মোট ১,৯৫৭ জন প্রার্থী অংশগ্রহণ করার জন্য মনোনয়নপত্র জমা দেয়। এর পর কিছু প্রার্থী তাদের প্রার্থীতা প্রত্যাহার করে নেয়। মনোনয়নপত্র বাছাই শেষে ১,৫৭৯ জন প্রার্থী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দীতা করে। আওয়ামী লীগ ১৭০ আসনে প্রার্থী দেয়। এর মধ্যে ১৬২টি আসন পূর্ব পাকিস্তানে এবং অবশিষ্টগুলি পশ্চিম পাকিস্তানে। জামায়াতে ইসলামী দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সংখ্যক প্রার্থী দেয়। তাদের প্রার্থী সংখ্যা ১৫১। পাকিস্তান পিপলস পার্টি মাত্র ১২০ আসনে প্রার্থী দেয়। তার মধ্যে ১০৩ টি ছিল পাঞ্জাব ও সিন্ধু প্রদেশে। পূর্ব পাকিস্তানে তারা কোন প্রার্থী দেয়নি। পিএমএল (কনভেনশন) ১২৪ আসনে, পিএমএল (কাউন্সিল) ১১৯ আসনে এবং পাকিস্তান মুসলিম লীগ (কাইয়ুম) ১৩৩ আসনে প্রতিদ্বন্দীতা করে।
নির্বাচনে জনগণের ব্যাপক অংশগ্রহণ এবং প্রায় ৬৫% ভোট পড়েছে বলে সরকার দাবী করে। সর্বমোট ৫৬,৯৪১,৫০০ রেজিস্টার্ড ভোটারের মধ্যে ৩১,২১১,২২০ জন পূর্ব পাকিস্তানের এবং ২৩,৭৩০,২৮০ জন ছিল পশ্চিম পাকিস্তানের ভোটার। [১৫]
ন্যশনাল এ্যাসেম্বলীতে আওয়ামী লীগ ১৬০ টি আসনে জয়লাভ করে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। সাধারণ নির্বাচনের একই সাথে প্রাদেশিক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এ নির্বাচনেও আওয়ামী লীগ পূর্ব পাকিস্তান এ্যাসেম্বলীর ৩০০টি আসনের মধ্যে ২৮৮টিতে জয়লাভ করে। পাকিস্তান পিপলস পার্টি পশ্চিম পাকিস্তানে ১৩৮টি আসনের ৮১টিতে জয়লাভ করে। [১৫]
আওয়ামী লীগ ৩৮.৩% ভোট এবং আসন ১৬০
পাকিস্তান পিপলস পার্টি ১৯.৫% ভোট এবং আসন ৮১
পিএমএল (কাইয়ুম) ৪.৫% ভোট এবং আসন ৯
পিএমএল (কনভেনশন) ৩.৩% ভোট এবং আসন ৭
জমিয়ত উলেমা -ই- ইসলাম ৪.০% ভোট এবং আসন ৭
মারকাজি জমিয়তন-উলেমা-পাকিস্তান ৪.০% ভোট এবং আসন ৭
ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ওয়ালি) ২.৩% ভোট এবং আসন ৬
জামায়াত-ই-ইসলামী ৬.০% ভোট এবং আসন ৪
পিএমএল (কাউন্সিল) ৬.০% ভোট এবং আসন ২
পিডিপি ২.৯% ভোট এবং আসন ১
স্বতন্ত্র ৭.১% ভোট এবং আসন ১৬
১৯৭১ সাল হতে পারতো পাকিস্তানের জন্য সবচেয়ে ভালো সময়। কারণ এই প্রথম সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। যদিও এই নির্বাচন সামরিক শাসনের অধীনে হয়েছে তারপরও এই নির্বাচন নিয়ে কোন পক্ষেরই অভিযোগ ছিল না। সুষ্ঠু নির্বাচন সবাই মেনে নেন। সংবিধান অনুযায়ী বৈধ প্রধানমন্ত্রী হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করেন আওয়ামীলীগের শেখ মুজিব। ইয়াহিয়া খান সেভাবেই প্রস্তুত হচ্ছিলেন। কিন্তু বাধ সাধে ভুট্টো। সে প্রশ্ন তোলে নৈতিকতার। কারণ পাঁচটি প্রদেশের মধ্যে একটি প্রদেশ ছাড়া বাকী চারটিতে কোন সমর্থনই পায়নি আওয়ামীলীগ। শুধু একটি প্রদেশের ভোট দিয়ে পুরো পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হওয়া সমীচীন নয়। প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া উভয়পক্ষকে আলোচনার প্রস্তাব দেন। মুজিব আলোচনা প্রত্যাখ্যান করেন এবং বলেন কারো যদি আলোচনা করতে হয় সে যেন ঢাকায় এসে আলোচনা করে। প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া ভুট্টোকে নিয়ে ঢাকায় আসেন। পার্লামেন্ট অধিবেশন স্থগিত করেন এবং শান্তিপূর্ণ ক্ষমতা হস্তান্তরের জন্য ত্রিপক্ষীয় আলোচনা শুরু করেন।
ষড়যন্ত্র শুরু হয় ১৯৬২ সাল থেকেঃ
রুশপন্থী বামেরা একটা সফল বিপ্লবের জন্য চেষ্টা করে যাচ্ছিল যেখানে তাদের আদর্শ তারা বাস্তবায়ন করবে। এদিকে র’ গঠিত হওয়ার পর তাদের ১ম প্রজেক্ট হলো পাকিস্তান আলাদা করা। ১৯৬২ সালে সিরাজুল আলম খানের নেতৃত্বে ছাত্রলীগের মধ্যে একটি গোপন সংগঠন সৃষ্টি হয় যার নাম নিউক্লিয়াস। র’ এর পক্ষ থেকে চিত্তরঞ্জন, ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে সিরাজুল আলম খানের সমন্বয়ে এই আন্দোলন অত্যন্ত গোপনে চলতে থাকে। ছাত্রলীগের মধ্যে যারা সমাজতন্ত্রের পক্ষে তাদের আস্তে আস্তে গোপন সংগঠনে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এরাই মূলত বাংলাদেশ নাম ঠিক করে, পতাকা ঠিক করে, সংগীত ঠিক করে ১৯৬৮ সালে। [১৬, ১৭]
অপরদিকে মাওবাদীরা মানে চীনপন্থী বামেরাও এমন একটি রাষ্ট্রের স্বপন দেখতো তবে তাদের গুরুদের কাজ থেকে আশা না পাওয়ায় তারা একটু পিছিয়ে থাকে। ভাসানী নিউক্লিয়াস সম্পর্কে জানতেন। কিন্তু চীন পাকিস্তানের কৌশলগত মিত্র হওয়ায় ভাসানীর বহিঃবিশ্বের সাপোর্ট পাওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। তবুও সে তার জনপ্রিয়তাকে পুঁজি করে স্বাধীনতার ঘোষনা দিয়ে দেয়। এই ঘোষনাই তার রাজনৈতিক ক্যরিয়ার শেষ করে দেয়। কারণ এদেশের পাঁচ শতাংশ মানুষও এমনকি ভাসানীর দল ন্যাপ যারা করে তারাও স্বাধীনতার পক্ষে ছিল না। [১৭]
র’ আর নিউক্লিয়াসের লোকজন গোপনে স্বাধীনতার প্রস্তুতি নিতে থাকে। এক্ষেত্রে তাদের প্রয়োজন ছিল কোন একটা গন্ডগোলের উসিলায় দেশে যুদ্ধ লাগিয়ে দেয়া। বাকী কাজ ভারত করবে। এটা ছাড়া তাদের একজন নেতাও দরকার ছিল। তারা মুজিবকে নানানভাবে প্ররোচিত করেন। মুজিব তাদের প্ররোচনায় কান দেন নি। আসলে কান দেয়ার কোন প্রয়োজনই মুজিবের পড়েনি। মুজিব যেখানে পুরো পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার যোগ্যতা রাখে সেখানে কেন সে শুধু শুধু দেশ ভাগ করে একটা ছোট দেশের প্রধানমন্ত্রী হবে? আবার ভাগ হয়ে গেলে সেই দেশটা ভারতের পেটের ভেতর ঢুকে যাবে! আ স ম রব সহ ছাত্রলীগের নিউক্লিয়াসপন্থী নেতারা ৭১ এর ২ মার্চ বাংলাদেশের পতাকা মুজিবের বাড়ির সামনে উত্তোলন করেন। মুজিব অত্যন্ত রাগান্বিত হন এবং নিজেই পতাকা ছিড়ে ফেলেন। তারপরও থেকে থাকে নি তারা, গনহত্যা চালাতে শুরু করে। [১৬]
৩ ও ৪ মার্চ চট্টগ্রামের ফিরোজ শাহ কলোনীতে ও ওয়্যারলেস কলোনীতে প্রায় ৭০০ অবাঙ্গালীদের বাড়িঘরে লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করে। এখানে বসবাসকারী বহু শিশু, নারী, পুরুষ নিহত হয়। সে সময় সরকারি হিসেবে ৩০০ লাশ দাফন করা হয়। [১৮, ১৭, ১৯ ২০, ২১]
দ্যা টাইমস অফ লন্ডন ১৯৭১ সালের ৬ এপ্রিল রিপোর্ট করেছিলো, হাজার হাজার সহায় সম্বলহীন মুসলিম উদ্বাস্তু যারা ১৯৪৭ সালে দেশভাগের সময় পূর্ব পাকিস্তানে এসে আশ্রয় গ্রহন করে তারা গত সপ্তাহে বিক্ষুব্ধ বাঙ্গালীদের দ্বারা ধ্বংসাত্মক আক্রমনের শিকার হয়। বিহারী মুসলিম উদ্বাস্তু যারা সীমানা পেরিয়ে ভারতে প্রবেশ করে এবং ভারতে প্রবেশকারী একজন বৃটিশ টেকনিশিয়ান এই খবর নিশ্চিত করেন। উত্তর পূর্ব শহর দিনাজপুরে শত শত অবাঙ্গালী মুসলিম মারা গিয়েছে। [১৭, ২২]
খুলনায় টেলিফোন এক্সচেঞ্জে ৪ মার্চ কয়েকজনকে হত্যা করা হয়, ৫ মার্চ খালিশপুর ও দৌলতপুরে ৫৭ জনকে অবাঙ্গালীকে ছোরা দা দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। সামরিক বাহিনীর কঠোর সমালোচক সাংবাদিক মাসকারেনহাসও স্বীকার করেছেন অবাঙ্গালীদের এই অসহায়ত্বের কথা। অবাঙ্গালীদের জান মাল রক্ষায় শেখ মুজিবের পক্ষ থেকে বাহ্যত নির্দেশ থাকলেও কোন কার্যকর উদ্যোগ ছিলনা। আওয়ামীলীগের কর্মীরা অদৃশ্য ইঙ্গিতে হত্যা খুন লুটতরাজ করে যাচ্ছিল অবারিতভাবে। সারাদেশেই চলছিল নিষ্ঠুর হত্যাকাণ্ড। সেই হিসেবে ঢাকা অনেক ভালো ছিল। [১৭, ২৩, ২২]
ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসসহ অনেক দূতাবাসে হামলা চালায় বিদ্রোহীরা। ১২ মার্চ ও ১৫ মার্চ মার্কিন কনসুলেট লক্ষ্য করে বোমা হামলা ও গুলি করা হয়। ১৯ মার্চ হোটেল ইন্টারকন্টিনালে বোমা হামলা ও গুলি করে বিদ্রোহীরা। এগুলো ছিল শান্তি আলোচনার জন্য বড় অন্তরায়। তারপরও বলা চলে ইয়াহিয়া, ভুট্টো ও মুজিব আলোচনা ফলপ্রসুই হতে যাচ্ছিল। পরিস্থিতির উপর মুজিবসহ কারোই নিয়ন্ত্রণে ছিলনা। সেনাবাহিনীও সরকারি আদেশের বাইরে কোন জোরালো ভূমিকা রাখতে পারছিল না। [১৭, ২৩]
আর এদিকে RAW, এদেশীয় বাম ও আওয়ামীলীগে ঘাপটি মেরে থাকা সমাজতন্ত্রবাদীরা এদেশকে যুদ্ধের দিকে ঠেলে দেয়ার জন্য মরিয়া হয়ে চেষ্টা করছে। ইয়াহিয়া, ভুট্টো ও মুজিবের আলোচনাকে ব্যর্থ করে দেয়ার জন্য একের পর এক অবাঙ্গালী গণহত্যা চালিয়েছে, সারা দেশে অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে। অনেক বিহারীকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হলে বিশেষ করে জগন্নাথ হল এবং ইকবাল হলে (বর্তমান জহুরুল হক হল) আটকে রেখে নির্যাতন ও হত্যা করা হয়। [১৭, ২২]
সারাদেশে সেনাবাহিনীর উপর বিনা উস্কানীতে আক্রমন করেছিলো বাঙ্গালীদের একটা অংশ। সবচেয়ে বড় ঘটনা ঘটে জয়দেবপুরে। গাজিপুরে সমরাস্ত্র কারখানার নিরাপত্তা জোরদার করার জন্য ব্রিগেডিয়ার জাহানজেবের নেতৃত্বে একদল সৈন্য সেখানে পৌঁছানোর আগে আওয়ামীলীগ কর্মীরা জয়দেবপুরে ব্যরিকেড সৃষ্টি করে। ব্যরিকেডের জন্য তারা একটি ট্রেনের বগি ব্যবহার করে। অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে জাহানজেবের নেতৃত্বে সৈন্যদল। তারা ব্যরিকেড সরিয়ে সেখানে পৌঁছায়। নিরাপত্তার বিষয়গুলো দেখে জাহানজেব আরবাব আবার যখন হেডকোয়ার্টারে ফিরে যাচ্ছিলেন তখন বিশৃংখলাকারীরা সৈন্যদলকে আবারো ঘিরে ফেলে। বন্দুক, শর্টগান, লাঠি, বোমা ইত্যাদি নিয়ে হামলা চালায়। জাহানজেব বাঙ্গালী অফিসার লে. ক. মাসুদকে গুলি চালাতে নির্দেশ দিলেন। মাসুদ ইতস্তত করলে অপর বাঙ্গালী অফিসার মঈন তার সৈন্যদের নিয়ে পাল্টা আক্রমন চালালে কিছু মানুষ নিহত হয় বাকীরা পালিয়ে যায়। মাসুদকে পরে ঢাকায় এসে দায়িত্ব থেকে অব্যহতি দেয়া হয়। তার স্থলাভিষিক্ত করা হয় আরেক বাঙ্গালী অফিসার কে এম সফিউল্লাহকে। [১৭, ২৩]
এই ঘটনার স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে কে এম সফিউল্লাহ বলেন, ১৯ মার্চ সকাল দশটায় তার ইউনিটকে জানানো হয় ব্রিগেড কমান্ডার মধ্যহ্নভোজে আসছেন এবং নিকটবর্তী গাজিপুর সমরাস্ত্র কারখানা পরিদর্শন করবেন। কিন্তু জনতা প্রায় ৫০০ ব্যরিকেড বসিয়ে সৈন্যদের আটকে দেয়। এগুলো সরিয়ে তারা আসলেও ফিরে যাওয়ার সময় জয়দেবপুরে মজবুত ব্যরিকেড সৃষ্টি করলে লে. ক. মাসুদ তাদের বুঝানোর চেষ্টা করেছিলেন। এমন সময় দুজন বাঙ্গালী সৈনিক জাহানজেবকে জানায় তাদেরকে বেধড়ক পিটিয়েছে, অস্ত্র গোলাবারুদ ছিনিয়ে নিয়েছে। এবার জাহানজেব গুলি করার নির্দেশ দিলে মঈন তার সৈন্যদের গুলি করতে বলে। তবে বাংলায় বলে দেয় ফাঁকা গুলি করার জন্য। এরপরও পরিস্থিতির নিয়ন্ত্রনে না এলে এবার জাহানজেব কার্যকরভাবে গুলি করার নির্দেশ দেন। তারাও পাল্টা গুলি ছোঁড়ে। দু’জন নিহত হয়। সফিউল্লাহ আরো জানান, গাজিপুরের পরিস্থিতিও ছিল উত্তেজনাকর। রাস্তায় ব্যরিকেড দেয়া হয়েছিল। সমরাস্ত্র কারখানার আবাসিক পরিচালক ব্রিগেডিয়ার করিমুল্লাকে আটকে ফেলে বাঙ্গালীরা। আবাসিক পরিচালককে উদ্ধার করতে আমরা সেনা প্রেরণ করেছিলাম। [২৩]
এভাবে সারাদেশে সেনাবাহিনীকে নানাভাবে উস্কে দিয়ে যুদ্ধাবস্থা সৃষ্টি করেছিলো বাঙ্গালীদের একটা অংশ। ইয়াহিয়া বিদ্রোহ দমন করার জন্য টিক্কা খানকে এদেশে আনলেও সেনাবাহিনীকে শুধুমাত্র আক্রান্ত হওয়া ছাড়া কোন ভূমিকা নিতে বারণ করেন। ২৫ মার্চ পর্যন্ত পাকিস্তান সেনাবাহিনীর এই ধৈর্য্যের প্রশংসা করেন পাকিস্তান সেনাবাহিনীর কট্টর সমালোচক সাংবাদিক মাসকারেনহাস। এসব ঘটনায় মুজিব বেশ চাপ পড়েছিলেন। সমঝোতাও পড়েছিলো হুমকির মুখে। তারপরও হয়তো সমঝোতা হত। কিন্তু একটা ছবি যা বিদেশী পত্র-পত্রিকায় ছাপা হয়েছিলো এরপর আর কোন আলোচনাতে অংশ নিতে রাজি হয়নি ইয়াহিয়া এবং ভুট্টো। সেটি ছিল ঢাকা ভার্সিটি এলাকায় যুবক ছেলে মেয়েদের যুদ্ধের প্রস্তুতি হিসেবে মার্চপাস্টের ছবি। ইয়াহিয়া এবং ভুট্টো একথা মনে করেই নিয়েছেন আলোচনার নামে সময়ক্ষেপন করে মূলত মুজিব ভারতীয় স্বার্থ হাসিলের জন্য যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছে।
এই রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকান্ডের জন্য ও আটক বিহারীদের উদ্ধারের জন্য সেনাবাহিনী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হল সমূহে অভিযান চালায়। এসময় তারা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা খালি করে দেয়ার জন্য বলেন। সকল ছাত্র এবং শিক্ষক হল ছেড়ে দিলেও কয়েকজন শিক্ষক ও প্রায় পঞ্চাশজনের মত ছাত্র র’ ইঙ্গিতে সেদিন বিশ্ববিদ্যালয় না ছেড়ে সেনাবাহিনীর সাথে যুদ্ধে লিপ্ত হয়। বিদ্রোহী ছাত্রদের চেষ্টা ছিল বালির বাঁধের মত। সেদিন হলে যারা সেনাবাহিনীর সাথে যুদ্ধে অবতীর্ণ হতে চেয়েছিলো তাদের সবাইকে নির্মমভাবে হত্যা করে সেনাবাহিনী। এটাই অপারেশন সার্চলাইট নামে পরিচিত। এবং এটা খুবই যৌক্তিক অপারেশন ছিল। তবে সবাইকে হত্যা না করে গ্রেপ্তার করতে পারলে পাকিস্তান সরকার হয়তো সেসময় পরিস্থিতি ভালোভাবে সামাল দিতে পারতো। [১৭]
এতক্ষন পর্যন্ত যত ঘটনা ঘটেছে তাতে কোনভাবেই দেশ ভাগ হওয়ার মত পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়নি। এদেশের মানুষ পাকিস্তান সেনাশাসনের প্রতিবাদ করেছে। গণতন্ত্র চেয়েছে কিন্তু দেশভাগ কেউই চায়নি। এর পরদিনই জিয়াউর রহমান নিজ সিদ্ধান্তে ক্যু করেন। ওসমানী তার এই ক্যু কে ভালো চোখে দেখেননি। তিনি কিছু রাজনৈতিক লোকদের একত্র করে ১৭ এপ্রিল আবার ক্যু করেন এবং স্বাধীন রাষ্ট্রের ঘোষনাপত্র পাঠ করেন অতঃপর ভারত গমন করেন। জয় হয় ভারতীয় ষড়যন্ত্রের। জামায়াত সেসময় নির্বাচিত প্রতিনিধিদের কাছে শান্তিপূর্ণ ক্ষমতা হস্তান্তরের জন্য আন্দোলন করে এবং দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষার পক্ষে অবস্থান নেয়। জামায়াতের এই অবস্থান ছিল এদেশের অধিকাংশ মানুষের অবস্থান। আওয়ামীলীগের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ স্বাধীনতার বিপক্ষে অবস্থান নেন। স্বাধীনতা এদেশের মানুষের দাবী ছিল না। [১৭]
কথিত স্বাধীনতার নামে ভারতের গোলামী চেয়েছিলেন এদেশের কিছু সমাজতন্ত্রী মানুষেরা আর কিছু উচ্চবিলাসী সেনা কর্মকর্তা। জামায়াত সেসময় একটি রাজনৈতিক দল হিসেবে অবস্থান নিয়েছে কোন সশস্ত্র গ্রুপ হয়ে যুদ্ধে অংশগ্রহন করেনি। জামায়াত যুদ্ধ বন্ধে কয়েকবার চেষ্টা করেছিল, শান্তি আনার চেষ্টা করেছিল, সরকার এবং বিচ্ছিন্নতাবাদীদের মধ্যে সমজোতার চেষ্টা করেছিল কিন্তু দু-পক্ষের বাড়াবাড়িতে সেটা সম্ভব হয়নি। হত্যা খুন ধর্ষন উভয় পক্ষ করেছে। জামায়াত উভয়পক্ষের অন্যায় আচরণের প্রতিবাদ করেছে আর বিচ্ছন্নতাবাদীদের বিরুদ্ধে কথা বলেছে যারা ভারতের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করেছে। [২৪]
১- ইসলামী বিপ্লবের পথ/ সাইয়্যেদ আবুল আলা মওদুদী
২- মাওলানা মওদুদী/ একটি জীবন একটি ইতিহাস
৩- The History of Urdu Language
৪- ভাষা আন্দোলন, বাংলা পিডিয়া
৫- কাদিয়ানী সমস্যা/ সাইয়্যেদ আবুল আলা মওদুদী
৬- মাওঃ মওদুদী, একটি জীবন একটি ইতিহাস/ আব্বাস আলী খান
৭- ছয় দফা থেকে বাংলাদেশ/ রবীন্দ্রনাথ ত্রিবেদী
৮- বাংলাদেশ আমার বাংলাদেশ, প্রামান্য চিত্র।
৯- বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে 'র' ও সিআইএর ভূমিকা/ মাসুদুল হক।
১০- আব্দুল মালেক উকিলের সাক্ষাতকার, সাপ্তাহিক মেঘনা, ১৯৮৫ সালের ১৬ই ডিসেম্বর
১১- কাল নিরবধি/ ড: আনিসুজ্জামান
১২- স্বৈরাচারের দশ বছর/ আতাউর রহমান খান
১৩- বাংলাদেশে র/ আবু রুশদ
১৪- সত্য মামলা আগরতলা/ কর্ণেল শওকত আলী (অবঃ)
১৫- The last days of United Pakistan/ G.W.Choudhury
১৬- দুঃসময়ের কথাচিত্র সরাসরি/ ড. মাহবুবুল্লাহ ও আফতাব আহমেদ
১৭- বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধঃ বহুমাত্রিক বিশ্লেষণ, এম আই হোসেন।
১৮- দ্যা ক্রুয়েল বার্থ অব বাংলাদেশ, আর্চার ব্লাড
১৯- The 1971 Indo-Pak war, A soldier's Narrative, Hakim Arshad Koreshi
২০- The Crisis in East Pakistan, Govt of Pakistan, 5 August, 1971.
২১- Anatomy Of Violence, Sarmila Bose
২২-The event in East Pakistan, 1971- International Commission of Jurists, Geneva.
২৩- ডেড রেকনিং, শর্মিলা বসু
২৪- পলাশী থেকে বাংলাদেশ/ অধ্যাপক গোলাম আযম
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন